সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ করলে আমরা মাঝে মাঝেই দেখতে পাই মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া কিছু বিজ্ঞাপন রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলো “স্পট রিডাকশন” নামে পরিচিত একটি ধারণা প্রচার করে, দাবি করে যে বিশেষভাবে পরিচালনা করা কিছু ব্যায়াম বা ওয়ার্কআউটের মাধ্যমে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে, সাধারণত পেটের মেদ হ্রাস পাবে। বিশেষ ধরনের ডায়েট, ওষুধ বা কিছু পরিপূরক ব্যবহার করে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশের মেদ কমানোর দাবি করে এই বিজ্ঞাপন এবং এদের চিত্তাকর্ষক ছবি দেখে আমরা বিশ্বাসও করে থাকি। দুর্ভাগ্যবশত, স্পট রিডাকশন ওজন হ্রাসের একটা মিথ। একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে মেদ কমানো সহজভাবে সম্ভব নয়।
গবেষণা বলছে আমাদের শরীর ঠিক করে যে আমরা কোথায় মেদ সঞ্চয় করবো এবং কোথা থেকে আমাদের মেদ ঝরবে। ঠিক যেমন ডিএনএ নির্ধারণ করে যে আমরা খাটো না লম্বা হব ঠিক তেমনি জিন নির্ধারণ করে আমাদের শরীরে মেদ কোথায় সঞ্চিত হবে। গবেষণা দেখায় যে আমাদের শরীরে মেদ বিতরণের ক্ষেত্রে ৬০% দায়ী হল জিন। সুতরাং, ওজন বৃদ্ধি পেলে যদি আমার মায়ের প্রথমে তার মুখ ভারী হওয়ার প্রবণতা থাকে তবে আমারও একই ঘটনা ঘটার সুযোগ রয়েছে। প্রকৃতিগতভাবে আমাদের লিঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের দেহে কোথায় মেদ সঞ্চয় হবে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরে বেশি পরিমাণে মেদ থাকে এবং এটি হয়েছে কারণ মহিলারা শিশুর জন্ম দেয় ও তাদের লালনপালন করে। মহিলাদের প্রথমে মুখ ও হাত থেকে মেদ ঝরে যায় কিন্তু নিতম্ব, উরু প্রভৃতি জায়গায় মেদ সঞ্চিত থাকে কারণ তারা সন্তান ধারন করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংস পেশি , বিপাক এবং হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন আসে, যা মেদ কোথায় জমবে এবং কত দ্রুত হ্রাস পাবে তা প্রভাবিত করতে পারে। ঋতুবন্ধের পরে মহিলা এবং মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যভাগের চারপাশে মেদ জমা হয় যা ঝরানো বেশ কঠিন।
স্পট রিডাকশন একটি মিথ কারণ- আমাদের শরীরের মেদ কোথায় হ্রাস পাবে তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু আমরা শরীরের সামগ্রিক মেদ হ্রাস করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংশের মেদ কমাতে পারি। ব্যায়াম করার সময় আমরা একটি নির্দিষ্ট জায়গার ওজন নাও কমাতে পারি কিন্তু সমস্ত ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ শরীরের মেদ ঝরাতে এবং পেশি সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে আমাদের শরীরের আকৃতিতে পরিবর্তন আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদী ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। আমাদের শরীরের পেশি এবং মেদ আমাদের বিপাকীয় হার নির্ধারণ করে। যেহেতু পেশি বিপাকীয়ভাবে চর্বির চেয়ে বেশি সক্রিয় (অর্থাৎ পেশি চর্বির চেয়ে বেশি শক্তি পোড়ায়), একজন ব্যক্তির যার শরীরে বেশি পেশি রয়েছে তার বিপাকীয় হার বেশি মেদ রয়েছে এমন ব্যক্তির তুলনায় দ্রুত হয়। সুতরাং মেদ কমানোর ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো পদক্ষেপে এগোতে হবে যাতে ধীরে ধীরে আমরা মেদ ঝরাতে পারি এবং আমাদের জীবনযাত্রায় অর্থাৎ খাদ্য, ব্যায়াম এবং ঘুমে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের প্রয়োজন যাতে আমরা সারাজীবন স্থায়ী অভ্যাস তৈরি করতে পারি।