আমাদের পৃথিবী মাঝে মাঝেই ধীরগতির, ছোটো ছোটো ভূমিকম্প বা কম্পনের সম্মুখীন হয় যা খুব একটা অনুভূত হয় না। আবার কিছু কম্পন একই প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্টি হলেও বড়ো ধরনের ক্ষতিকারক ভূমিকম্পে পরিণত হতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে যে এর প্রধান কারণ হল- ফ্র্যাকিং । পৃথিবীর আভ্যন্তর থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পুনরুদ্ধারের জন্য পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে কিছু তরলের জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। এই পদ্ধতিকে ফ্র্যাকিং বলে। সাধারণত বর্জ্য জল ব্যবহার করে পদ্ধতিটি কার্যকর করা হয় কিন্তু এই গবেষণায় মূলত দেখা হয়েছে যে জলের বদলে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করলে তার ফলাফল কী হতে পারে? মাটির গভীরে কার্বন অনুপ্রবেশ ঘটালে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ হ্রাস পায় ও তাপ ধারনেও বাধা দেয়। কিছু অনুমান অনুসারে, কার্বন ডাই অক্সাইড ফ্র্যাকিং বার্ষিক এক বিলিয়ন সৌর প্যানেলের মতো কার্বন সংরক্ষণ করতে পারে। বর্জ্য জলের তুলনায় তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধাজনক কারণ এটি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বনকে দূরে রাখে। ইউসি রিভারসাইডের জিওফিজিক্সের সহযোগী অধ্যাপক, অভিজিৎ ঘোষের মতে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড বা জল উভয়ই কম্পনের কারণ হতে পারে। এখন এই কম্পন থেকে তরলের গতিবিধি চিহ্নিত করতে এবং তরল অনুপ্রবেশের ফলে সৃষ্ট ত্রুটিগুলোর গতিবিধি নিরীক্ষণ করতে পারা যাচ্ছে। সিসমোগ্রাফে, নিয়মিত ভূমিকম্পন এবং কম্পন ভিন্নভাবে প্রদর্শিত হয়। বড়ো কম্পনের ক্ষেত্রে কম্পনের ব্যাপকতা বা প্রশস্ততা বেশি সঙ্গে তীক্ষ্ণ ঝাঁকুনি সৃষ্টি করে কিন্তু কম্পন আরও মৃদু হলে, অনেক কম প্রশস্ততা সহ গ্রাফ ধীরে ধীরে উপরে ওঠে এবং তারপর ধীরে ধীরে নেমে যায়। পূর্বে, কম্পনের উৎস সম্পর্কে ভূমিকম্পবিদদের মধ্যে বিতর্ক ছিল। কিছু গবেষণাপত্র যুক্তি দিয়েছিল যে এই ছোটো ছোটো কম্পন হাজার হাজার মাইল দূরে বড়ো ভূমিকম্পের সংকেত দিচ্ছে আবার অন্যরা ভেবেছিল যে সেগুলো মানব ক্রিয়াকলাপের দ্বারা সৃষ্ট শব্দ যেমন ট্রেন বা শিল্প যন্ত্রপাতির চলাচল। অভিজিৎ ঘোষের মতে সিসমোমিটার তেমন বুদ্ধিমান যন্ত্র নয় কারণ কাছাকাছি ট্রাক চললে বা নিজের পা মাটিতে ঠুকলে সেই কম্পনও সিসমোমিটারে রেকর্ড হবে। তাই কিছু সময়ের জন্য বিজ্ঞানীরাও নিশ্চিতভাবে জানত না যে সংকেতগুলো তরল ইনজেকশনের সাথে সম্পর্কিত ছিল কিনা। কম্পনের উত্স নির্ধারণ করতে, গবেষকরা ওয়েলিংটন, কানসাসের একটি ফ্র্যাকিং সাইটের চারপাশে স্থাপিত সিসমোমিটার ব্যবহার করেছিলেন। তারা ফ্র্যাকিং ইনজেকশনের পুরো সময়কালের অর্থাৎ ছমাসের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেই সঙ্গে ইনজেকশনের এক মাস আগে এবং পরবর্তী এক মাসেরও তথ্য নিয়েছিলেন। পারিপার্শ্বিক শব্দ বাদ দেওয়ার পরে, গবেষকের দল দেখিয়েছেন যে অবশিষ্ট সংকেতগুলো মাটির নীচে উত্পন্ন হয়েছিল এবং তরল অনুপ্রবেশ ঘটানোর সময় উপস্থিত ছিল। সবাই অবগত যে ফ্র্যাকিং বড়ো ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ স্খলন এবং তাদের উৎপত্তি বা কম্পন থেকে ভূমিকে রক্ষা করতে ফ্র্যাকিং বন্ধ করতে হবে যা প্রায় অসম্ভব। তাই কীভাবে শিলাগুলো বিকৃত হচ্ছে তা বোঝার জন্য এবং অনুপ্রবেশ ঘটানোর পরে তরলের গতিবিধি শনাক্ত করতে এই কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।