পাখিদের সাথে মানুষের সম্পর্ক সময়ের সাথে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে আমরা পাখিকে খাদ্যের উৎস হিসেবে দেখতাম, তাদের পালক, ডিম এবং চামড়া সংগ্রহ করতাম, পাখি শিকার করতাম। সময়ের সাথে সাথে আজ আমরা পাখিদের দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখি, তাদের কলকাকলি আমাদের শ্রুতিমধুর লাগে তাদের রঙের ভিন্নতা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাখিদের প্রতি আমাদের মুগ্ধতা বার্ডওয়াচিং বা বার্ডিং নামে একটি শখে রূপান্তরিত হয়েছে। ব্রিটিশ পক্ষীবিদ এডমন্ড সেলস বিংশ শতকের গোড়ার দিকে প্রথম এই শব্দটি তৈরি করেছিলেন।
সে সময়, যখন মানুষ পাখি দেখা শুরু করে তখন তাদের সঙ্গে থাকত খুব সাধারণ কিছু উপকরণ যেমন এক জোড়া দূরবীন, পাখিদের নিয়ে একটি বই এবং তারা যা দেখছে তা আঁকার জন্য একটি নোটপ্যাড । পাখি দেখে তাদের নিয়ে তথ্য নথিভুক্ত করে পরে তা মিলিয়ে সেই অঞ্চলের পাখির সংখ্যা সম্বন্ধে তারা ওয়াকিবহাল হত আর এই কাজটি ছিল বেশ শ্রমসাধ্য। ধীরে ধীরে ক্যামেরা স্কেচবুকের জায়গা দখল করে নিল এবং পাখিদের কলতান অডিও রেকর্ডারে রেকর্ড হতে থাকল। বিগত কয়েক বছরে, পাখিদের জানতে, বুঝতে, তাদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের অবদান সত্যি অনস্বীকার্য। ওর্নিথোলজিস মার্লিন-এর কর্নেল ল্যাব-এর মতো অ্যাপ পাখি শনাক্ত করতে তাদের ছবি ও আওয়াজ ব্যবহার করতে পারে। eBird এবং iNaturalist পাখি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ২০২১ সালে, কর্নেল ল্যাব অফ অর্নিথোলজি BirdNET নামে একটি অ্যাপ প্রকাশ করেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এক গবেষণা প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ৩০০০-এরও বেশি সাধারণ পাখির প্রজাতিকে শনাক্ত করা যেতে পারে৷ যে সব নবাগত পাখি উত্সাহীদের পাখি সম্পর্কে অধিক জ্ঞান নেই তারা তাদের ফোনে একটি পাখির ডাক রেকর্ড করতে পারে যার ভিত্তিতে অ্যাপটি পাখির প্রজাতিটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। হাইকুবক্স (Haikubox), নামে আর একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক যন্ত্র ক্রমাগত বাড়ির বাগানে আসা পাখিদের ডাক রেকর্ড করে, পাখিদের নিরীক্ষণ করে এবং শনাক্ত করে। BirdNET-এর মাধ্যমে তার ব্যবহারকারীরা পাখিদের সম্পর্কে তথ্য জানতে পারে যা পাখির আচরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ। এআই-ভিত্তিক যন্ত্র পাখিদের পরিযায়ী বৈশিষ্ট্যের তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করে। যদিও এগুলো পাখিদের অভিবাসনের দিক এবং আকাশে পাখিদের গতি এবং ঘনত্ব বলতে পারে, কিন্তু তারা পাখিদের প্রজাতি সম্বন্ধে ধারণা দিতে পারে না। এখানেই BirdVox- নামে একটি AI-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা রয়েছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আকাশে অবাধে উড়ে যাওয়া পাখিদের শনাক্ত করে এবং শ্রেণিবদ্ধ করে।