নেপচুনের রঙ গাঢ় নীল এবং ইউরেনাসের সবুজ, সৌরজগতের এই গ্রহ দুটির রঙ আমরা এতদিন এটাই জেনে এসেছি – তবে এক নতুন গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে এই দুই অতিকায় তুষারের গোলা আকারের গ্রহ আসলে অনেকটা একই বা কাছাকাছি রঙের। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাট্রিক আরউইনের নেতৃত্বে গবেষণার সাহায্যে গ্রহগুলোর সঠিক রঙ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এবং তার দল দেখেছেন যে দুটি গ্রহই প্রকৃতপক্ষে সবজেটে নীল রঙের। যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে দুটি গ্রহের বেশিরভাগ আধুনিক চিত্র সঠিকভাবে তাদের প্রকৃত রঙ প্রতিফলিত করে না। বিশ শতকে এই ভ্রান্ত ধারণার উদ্ভব হয়েছিল যখন নাসার ভয়েজার ২ মিশনের মহাকাশযান এই দুই গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিল, সে সময়কার ছবিতে দুটি গ্রহের রঙ আলাদা ছিল।
একক-রঙের ছবিগুলোকে পরবর্তীতে কম্পোজিট কালার ইমেজ তৈরি করার জন্য পুনরায় একত্রিত করা হয়, যার ফলে তাদের সত্যিকারের রঙ ছবিতে ধরা পরেনি। এছাড়াও, ভয়েজার ২-এর প্রথম দিকের নেপচুনের ছবিগুলোকে আরও উজ্জ্বল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে মেঘ, বলয় এবং বাতাসকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। সেই সময়ে গ্রহ বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে-স্যাচুরেটেড রঙ ব্যবহার পরিচিত ছিল — এবং ছবিগুলোকে ব্যাখ্যা সহ প্রকাশ করা হয়েছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই পার্থক্যটি হারিয়ে গেছে। নতুন গবেষণায়, গবেষকরা ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির হাবল স্পেস টেলিস্কোপের স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোগ্রাফ (STIS) এবং মাল্টি ইউনিট স্পেকট্রোস্কোপিক এক্সপ্লোরার (MUSE) থেকে তথ্য ব্যবহার করেছেন। গবেষকরা এই তথ্য ব্যবহার করে ভয়েজার ২ ক্যামেরা এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ (WFC3) দিয়ে রেকর্ড করা ছবিগুলো পুনরায় ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করেন।
তথ্য প্রকাশ করে যে ইউরেনাস এবং নেপচুন দুটি গ্রহই আসলে সবজেটে নীল রঙের। প্রধান পার্থক্য হল নেপচুনে নীল রঙের আধিক্য রয়েছে যা সেই গ্রহে একটি পাতলা ধোঁয়াশা স্তরের কারণে বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে ইউরেনাসের একটি মেরু যখন সূর্যের দিকে থাকে অর্থাৎ গ্রীষ্ম এবং শীতে এটিকে একটু সবুজ দেখায়, আর সূর্য যখন বিষুব রেখার উপরে থাকে তখন এর কিছুটা নীল আভা থাকে। এর একটি কারণ হল ইউরেনাসের একটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঘূর্ণন রয়েছে। ইউরেনাস তার কক্ষপথের সমতল থেকে প্রায় ৯০-ডিগ্রি কোণে ঘোরে। এর কারণে মনে হয় যে ইউরেনাস ঘূর্ণায়মান বলের মতো সূর্যকে কাত হয়ে প্রদক্ষিণ করে। ১৯৮০-র দশকে ভয়েজারের উপর ভিত্তি করে অতিকায় তুষারের গোলা ইউরেনাস এবং নেপচুন ভবিষ্যতের রোবোটিক অনুসন্ধানকারীদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ গন্তব্য হতে পারে। প্রফেসর লেই ফ্লেচার, লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রহ বিজ্ঞানী বলেছেন যে ইউরেনিয়ান সিস্টেম অর্থাৎ এর অদ্ভুত বায়ুমণ্ডল থেকে শুরু করে এর বলয়, এর চাঁদ, অন্বেষণ করার মিশন আগামী দশকে মহাকাশ সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে থাকবে।