বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শুধু সমুদ্রের তাপমাত্রাই বাড়ায় না, বরং সমুদ্রে অক্সিজেনের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। এর প্রভাব যেমন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে পড়েছে তেমনই মানুষের জীবনেও এর প্রভাব সুপরিচিত। কিন্তু, নদীর বাস্তুতন্ত্রের উপর অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়া বা ডিঅক্সিজেনেশন নামক এই ঘটনার প্রভাব আমরা উপেক্ষা করে এসেছি। নেচার অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নদী উষ্ণ হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের তুলনায় দ্রুত অক্সিজেন হারাচ্ছে। এই ডিঅক্সিজেনেশনের ফলে বেশ কিছু জলজ প্রজাতির মৃত্যু হতে পারে বলে জানাচ্ছে এই গবেষণা। ডিঅক্সিজেনেশন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকেও চালিত করে। এর ফলে সমুদ্রের জলে বিষাক্ত ধাতু নির্গত হয়।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্য ইউরোপ জুড়ে প্রায় ৮০০টি নদী থেকে তথ্য পুনর্গঠনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, প্রায় ৮০০টি নদীর মধ্যে ৮৭% নদী উষ্ণ হয়েছে এবং ৭০% নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে গ্রামীণ নদীর তুলনায় শহরাঞ্চলের নদীগুলো খুব তাড়াতাড়ি উষ্ণ হচ্ছে, কিন্তু গ্রামের নদীতে দ্রুত ডিঅক্সিজেনেশন প্রত্যক্ষ করা গেছে৷ গবেষকদের মতে ভবিষ্যতে এই ডিঅক্সিজেনেশনের হার পূর্বের মাত্রার তুলনায় ১.৬ থেকে ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। গবেষক লি-র মতে ঘটনাটি বেশ ভয়ের, কারণ অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তা জলজ জীবনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। পরবর্তী ৭০ বছরের মধ্যে, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির মাছ সম্পূর্ণভাবে মারা যেতে পারে। মানুষ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য নদী অপরিহার্য। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও নদীতে এর প্রভাব উপেক্ষা করা হয়েছে। যদিও নদীর জলের তাপমাত্রা এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন স্তর জলের গুণমান এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের অপরিহার্য পরিমাপ, তবে এগুলো পরিমাপ করা কঠিন। তাই এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।