উইল স্মিথের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য আসন্ন ডিজনি+ সিরিজের পোল টু পোল চিত্রগ্রহণের সময় নতুন অ্যানাকোন্ডা প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক প্রফেসর ব্রায়ান ফ্রাই যিনি একজন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার।
প্রফেসর ফ্রাই জানিয়েছেন, স্থানীয় ওয়াওরানি লোকজনরা তাদের অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে সবচেয়ে বড়ো অ্যানাকোন্ডার নমুনা খোঁজার জন্য ন্যাশানাল জিওগ্রাফিকের দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আদিবাসী শিকারীদের সাথে এই সাপ অন্বেষণের জন্য ১০ দিনের জন্য তারা জঙ্গলে অভিযানে গিয়েছিলেন। নদীতে ডোঙা চালিয়ে গিয়ে তারা দেখতে পেয়েছিলেন, অগভীর এলাকায় বেশ কয়েকটা অ্যানাকোন্ডা লুকিয়ে শিকারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। তারা অভিযানের সময় ৬.৩ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বিশালাকার স্ত্রী অ্যানাকোন্ডার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওয়াওরানি আদিবাসীরা জানিয়েছে ৭.৫ মিটারেরও বেশি লম্বা এবং প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের অ্যানাকোন্ডা এই এলাকায় দেখা যায়। ইকুয়েডরীয় আমাজনের বাইহুয়েরি ওয়াওরানি টেরিটরির বামেনো অঞ্চলে অবস্থিত এই সাপগুলোর নতুন নামকরণ করা হয়েছিল উত্তরের সবুজ অ্যানাকোন্ডা (ইউনেক্টেস আকাইমা)। অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, উত্তরের সবুজ অ্যানাকোন্ডা প্রজাতি প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে দক্ষিণের সবুজ অ্যানাকোন্ডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং তাদের জিনগত পার্থক্য ৫.৫ শতাংশ। সামান্য পার্থক্য মনে হচ্ছে? মানুষ আর শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে জিনগত পার্থক্য হল মাত্র ২ শতাংশ।
অধ্যাপক ফ্রাই জানিয়েছেন, বর্তমানে আমাজন অঞ্চল উদ্বেগজনকভাবে পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন। কৃষি সম্প্রসারণের জন্য আমাজন অববাহিকার বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ২০-৩১ শতাংশ বাসস্থানের ক্ষতি হয়েছে, যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাজনের ৪০ শতাংশ বনভূমি প্রভাবিত হতে পারে। শিল্পায়ন, কৃষিকাজ, তেল উত্তোলনের সময় ভারী ধাতুর দূষণ আমাজনের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে। দাবানল, খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনও এই অঞ্চলের বিপন্নতার জন্য দায়ী। এই বিরল প্রজাতির অ্যানাকোন্ডার মতো এই বাস্তুতন্ত্রের নানা প্রজাতির অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। প্রফেসর ফ্রাই জানিয়েছেন, নতুন প্রজাতি আবিষ্কার যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ হল পেট্রোকেমিক্যাল থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে এই বিরল সাপ এবং আমাজনের অন্যান্য মুখ্য প্রজাতির প্রজননক্ষমতা ও প্রজননঅঙ্গের ক্ষতি হওয়া নিয়ে গবেষণা চালানো। তাদের এই গবেষণা এমডিপিআই বায়োডাইভার্সিটি-তে প্রকাশিত হয়েছে, যে গবেষণায় সহলেখক হিসেবে ওয়াওরানি সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়েছে।