মৌখিক বা লিখিত নির্দেশের সাহায্যে পূর্ব প্রশিক্ষণ ছাড়াই একটা নতুন কাজ সম্পন্ন করা মানুষের এক অনবদ্য ক্ষমতা। একবার আমরা কাজটা শিখে গেলে, এটা অন্য ব্যক্তিকে বলে বর্ণনা করতে পারি, যাতে অন্য ব্যক্তি আবার নিজে কাজটা করতে পারে। এই দুধরনের ক্ষমতা আমাদের অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি থেকে আলাদা করেছে। অন্য প্রাণীদের একটা নতুন কাজ শিখতে, অনেকবার প্রচেষ্টা করতে হয়, যাতে তারা ইতিবাচক বা নেতিবাচক সংকেত পেয়ে কাজটা করতে পারে, কিন্তু তারা তাদের গোষ্ঠীর কাউকে এটা বলে বুঝিয়ে শেখাতে পারবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI)-এর একটা উপ-ক্ষেত্রে, মানুষের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যেখানে যন্ত্র মৌখিক বা লিখিত তথ্য বুঝে সাড়া দেবে৷ ইউএনআইজিই ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের বেসিক নিউরোসায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক আলেকজান্ডার পগেট ব্যাখ্যা করেছেন, বর্তমানে AI ব্যবহার করে কথোপকথনকারী এজেন্টরা ভাষাগত তথ্য একত্রিত করে লিখতে বা ছবি তৈরি করতে পারে। কিন্তু, তারা একটা মৌখিক বা লিখিত নির্দেশকে সেন্সরিমোটর অ্যাকশনে অনুবাদ করতে পারেনা বা অন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারে না যাতে কাজটা আবার করা যায়।
ইউএনআইজিই ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের বেসিক নিউরোসায়েন্সেস বিভাগের গবেষক রেইডার রিভল্যান্ড নেচার নিউরোসায়েন্সে জানিয়েছেন, তারা এই দ্বৈত ক্ষমতা সহ একটি কৃত্রিম নিউরোনাল মডেল তৈরি করতে সফল হয়েছেন। মানুষের নিউরন যেভাবে মস্তিষ্কে একে অপরের কাছে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করে তার আদলে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এই কৃত্রিম নিউরনের মডেল, ৩০০ মিলিয়ন নিউরন রয়েছে এবং এটা ভাষা বোঝার জন্য প্রাক-প্রশিক্ষিত। এটাকে আবার কয়েক হাজার নিউরনের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা পরীক্ষার প্রথম পর্যায়ে, এই নেটওয়ার্ককে মানব মস্তিষ্কের ওয়ার্নিকের এলাকা অনুকরণ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। মস্তিষ্কের ওয়ার্নিকের অংশ আমাদের ভাষা উপলব্ধি করতে এবং তা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে,এই কৃত্রিম নেটওয়ার্ককে ব্রোকা’স এলাকা পুনরুত্পাদন করার জন্য প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। মানব মস্তিষ্কের ব্রোকা’স এলাকা, ওয়ার্নিকের এলাকার প্রভাবে শব্দ উৎপাদন ও উচ্চারণ করার জন্য দায়ী। পুরো প্রক্রিয়াটা ল্যাপটপে সম্পাদিত হয়েছিল। ইংরেজিতে লিখিত নির্দেশাবলী AI-তে প্রেরণ করা হয়েছিল। AI বিভিন্ন উদ্দীপকের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক ক্ষেত্রর দিকে নির্দেশ করতে পেরেছে, তার সাথে ঐ AI নিউরনের অন্য নেটওয়ার্কের প্রতিলিপিকে ভাষায় শেখাতে পেরেছে। এই গবেষণা ভাষা এবং আচরণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। রোবোটিক্স সেক্টরের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মেশিনগুলো একে অপরের সাথে যাতে কথা বলতে পারে সেই প্রযুক্তির বিকাশ প্রয়োজন।