১৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরদের পায়ের নীচে চাপা পড়া গাছপালার মধ্যে একধরনের সবুজ মস ছিল, যারা পিষে গিয়েও বেঁচে ছিল, আর তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে। ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ভারতীয় ভূখণ্ড এশিয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে হিমালয় পর্বতমালা তৈরি করে। আর এই মস হিমালয়ে, বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে তাদের নতুন হিমায়িত, রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে নতুনভাবে চলা শুরু করে। কিন্তু স্থল উদ্ভিদের এই বংশ, যাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবের মধ্যে অন্যতম মনে করা হয় তা এখন হ্রাস পাচ্ছে, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তন সেই হ্রাসের পিছনে একটা বড়ো কারণ।
প্রায় ৪০০-মিলিয়ন বছরের পুরানো প্রজাতি, টাকাকিয়া, দুটি প্রজাতি নিয়ে গঠিত: টি. সেরাটোফিলা এবং টি. লেপিডোজিওডস, এই দুটো প্রজাতিকে একসাথে শুধুমাত্র তিব্বতে দেখা যায়। এদের মধ্যে কোনো এক একটা প্রজাতি আলাস্কা এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সহ মুষ্টিমেয় কিছু জায়গায় পাওয়া যায়। টাকাকিয়া অনন্য মস, কারণ বাহ্যিক গঠন অনুযায়ী জীবাশ্ম হওয়া উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে বর্তমান, যে বৈশিষ্ট্য এখনও অপরিবর্তিত। এদের পাতার গঠনে আধুনিক উদ্ভিদের মতো ওপর ও নীচের অংশ আলাদা নয়, এদের স্টোমাটাও নেই, যার মাধ্যমে বেশিরভাগ গাছপালা শ্বাস নেয়। কিন্তু উদ্ভিদের আভ্যন্তরীণ অংশে, গবেষকরা এমন ১২১ টি জিন চিহ্নিত করেছেন যেগুলি প্রাচীনকাল থেকে দ্রুত বিবর্তিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু টাকাকিয়াকে চরম পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। গবেষকরা মনে করেন যে, প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে যখন হিমালয় পর্বতমালা উন্নীত হতে শুরু করে, তখন টাকাকিয়া অতিবেগুনী বিকিরণ, নিম্ন তাপমাত্রা এবং তুষারপাতের সংস্পর্শে এসেছিল, এই অবস্থা এই ক্ষুদ্র মস মানিয়ে নিয়েছিল। এর অভিযোজনের একটা নমুনা হল অন্যান্য মসের তুলনায় এর কোশে লিপিডের পরিমাণ বেশি, যা একে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন ডায়নোসরের সময় থেকে বেঁচে থাকা টাকাকিয়া কিন্তু এখন সমস্যার মুখে। তিব্বত মালভূমিতে গত এক দশকে, ১.৬% হারে এই মস হ্রাস পেয়েছে, যার হ্রাসের হার অন্যান্য স্থানীয় মসের তুলনায় অনেক দ্রুত। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার এর রেড লিস্ট অফ থ্রেটেনড স্পিসিস টি. সেরাটোফিলাকে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, টাকাকিয়ার মতো মসদের জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য জীবের তুলনায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। টাকাকিয়ার বিলুপ্তি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ০.৫ °C তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাছাড়াও বায়ুর গুণমান এবং আর্দ্রতার পরিবর্তনও মসের বিলুপ্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।