হুকওয়ার্ম বা বক্রকৃমি দ্বারা সংক্রামিত হওয়া মোটেও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয় , কিন্তু এক গবেষণা জানান দিচ্ছে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই কৃমি বেশ উপকার করে থাকে। এই ধরণের প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালে, অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবককে মানব হুকওয়ার্ম লার্ভা (নেকেটর আমেরিকান) দিয়ে সংক্রামিত করে দেখা হয় যে এই পরজীবীগুলি তাদের বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কিনা।
দুই বছরের গবেষণায় ২৪ জন অংশগ্রহণকারীকে নেওয়া হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকের ট্রায়ালের শুরুতে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি ছিল। গবেষণার শেষে, গবেষকরা দেখতে পান যারা হুকওয়ার্মে সংক্রামিত হয়েছিল তাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের প্ল্যাসিবো (অর্থাৎ যার মধ্যে হুকওয়ার্ম লার্ভা ছিলনা) দেওয়া হয়েছিল তাদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে । যদিও এই পরীক্ষায় এখনই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক নয় যে কৃমি সংক্রমণ উপকারী, কিন্তু ২০২১ সালে অন্য একটা পরীক্ষায় হুকওয়ার্ম দ্বারা অংশগ্রহণকারীদের সংক্রামিত করে দেখা গিয়েছিল এতে তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম উপকৃত হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন যে তাদের ট্রায়াল থেকে মনে করা হচ্ছে হুকওয়ার্ম চিকিত্সা বিপাকীয় স্বাস্থ্যের মূল নির্ধারক যেমন ইনসুলিন প্রতিরোধ স্থিতিশীল করতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে মানুষকে যখন কৃমিমুক্ত করা হয়, তাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী একটা ফ্যাক্টর ও টাইপ II ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের মতো বিপাকীয় সমস্যা বিকাশের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
পরীক্ষাতে ৪০ জন প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছিল, যাদের সবার ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। ২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ট্রায়াল সম্পন্ন করেছিল তাদের প্ল্যাসিবো অথবা ২০ -৪০ টা হুকওয়ার্মলার্ভা দিয়ে সংক্রমিত করা হয়েছিল। হুকওয়ার্ম সংক্রমণে আক্রান্তদের হাল্কা থেকে মাঝারি অন্ত্রের সমস্যা, যেমন ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা ডায়রিয়া, এরকম কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা গিয়েছিল, তাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। তবে অস্বস্তির কারণে তিনজন পরীক্ষা থেকে বাদ গেছেন। এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসার জন্য দলটি এখন একটা আন্তর্জাতিক, বৃহৎ আকারে গবেষণা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।