টীকা জীবন বাঁচায় – ১৯৭৪ সাল থেকে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তার সম্প্রসারিত বিশ্ব ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম চালু করেছিল, তখন থেকে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে এই টীকাকরণ। এমন কথাই জানাচ্ছে এক নতুন গবেষণা। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সকল শিশুর কাছে টীকা পৌঁছে দেওয়া। যদিও এই কাজে দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ ছিল তবুও বিগত ৫০ বছরে বহু মৃত্যু রোধ করা গেছে যার বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং এই প্রতিষেধক ব্যবহারের ফলাফল স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার টেলিথন কিডস ইনস্টিটিউটের একজন সংক্রামক রোগের মডেলার অ্যান্ড্রু শ্যাটকের মতে ৫০ বছর সময়কালে হামের টীকা ৬০ শতাংশেরও বেশি প্রাণ রক্ষা করেছে। এই অধ্যয়নের ফলাফল আমাদের মনে করিয়ে দেয় টীকা কতটা ভালোভাবে কাজ করে। শুধুমাত্র টীকাপ্রাপ্তদের রক্ষা করে তাই নয়, আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, ছোটো শিশু, বয়স্ক মানুষ অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিদেরও রক্ষা করে। কিন্তু সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিপজ্জনক টিপিং পয়েন্টে পৌঁছতে চলেছে যেখানে টীকা নেওয়ার হার এতটাই কমে গেছে যে টীকা না নেওয়া ব্যক্তিরা আর টীকাপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের দ্বারা সুরক্ষিত থাকছে না। সারা বিশ্বে প্রায় একই চিত্র উঠে আসছে যা বেশ উদ্বেগজনক। ২০০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগটি নির্মূল হওয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালে রেকর্ড সংখ্যক শিশুকে হামের প্রতিরোধে টীকা দেওয়া হয়নি, যা পরবর্তী বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বজুড়ে বহু দেশকে অসংখ্য সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে টীকা নিয়ে আত্মতুষ্টি এবং উদাসীনতা টীকা প্রদানের হার দ্রুত হ্রাস করছে। ভ্যাকসিন যখন রোগ প্রতিরোধে কাজ করে, তখন সেই রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায় ফলে মানুষ টীকাকরণ থেকে পিছিয়ে যায়। টীকার সাফল্যের শিকার টীকারণ নিজেই। স্মলপক্স ছিল প্রথম এবং একমাত্র সংক্রামক রোগ যা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নির্মূল করা হয়েছিল। পোলিও নির্মূলের রাস্তায় আমরা আজও হেঁটে চলেছি।
বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যুর হার ৪০% হ্রাস পেয়েছে যদিও গবেষকদের মতে স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে। ডব্লিউএইচও-এর গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বাঁচানো প্রতিটি জীবন, গড়ে ৬৬ বছরের পূর্ণ স্বাস্থ্য অর্জন করতে পেরেছে। যদিও টীকাকরণ সব ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে তা অসুস্থতার তীব্রতা এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে – যা ফলস্বরূপ, নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ প্রতিরোধে সম্ভাব্য সাহায্য করতে পারে। বর্তমানে গবেষকরা ভ্যাকসিন তৈরির কৌশল উন্নত করতে এবং আরও বেশি সংক্রামক রোগ এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে রক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষ চালিয়ে যাচ্ছেন।