উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ে কাশ্মীর উপত্যকা অবস্থিত। এই অঞ্চলের বিস্তৃত পারমাফ্রস্ট স্ট্রাকচার রক গ্লেসিয়ার নামে পরিচিত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরফের রয়েছে। আর এই পারমাফ্রস্টগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এক নতুন গবেষণায়। এর মধ্যে ১০০ টিরও বেশি হিমবাহে জায়গায় জায়গায় রয়েছে উঁচু নীচু গঠন যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে পারমাফ্রস্ট নড়তে চড়তে শুরু করেছে বা গলে গেছে। এমন কথাই বলছেন কেরালার অধ্যাপক রেম্যা। তার মতে এগুলোকে ‘সক্রিয় হিমবাহী শিলা’ বলা হয় এবং অঞ্চলটি উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হতে পারে।
রক- গ্লেসিয়ার বা শিলা হিমবাহগুলো সাধারণত পারমাফ্রস্ট, শিলার ধ্বংসাবশেষ এবং বরফের সংমিশ্রণে পাহাড়ি অঞ্চলে তৈরি হয়। একটি পূর্ব-বিদ্যমান হিমবাহ তার চলার সাথে সাথে ধ্বংসাবশেষ এবং শিলা জমা করতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে, যদি হিমবাহটি সরে যায় বা গলে যায়, তাহলে ধ্বংসাবশেষে ঢাকা বরফ একটি শিলা হিমবাহে রূপান্তরিত হতে পারে। গবেষকদের মতে এই প্রক্রিয়াটি বিগত পাঁচ দশকে দ্রুততর হয়েছে কারণ উষ্ণতা তীব্র থেকে তীব্র হয়েছে। এই শিলা হিমবাহগুলো অনেক উঁচু অঞ্চলে দেখা যায় এবং এদের পাশগুলো সাধারণত খুব খাড়া হয়।
খালি চোখে, এই শিলা হিমবাহগুলো সাধারণ ভূমির মতো দেখায় এবং প্রায়শই তাদের উপর বাসস্থানের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সঠিক শনাক্তকরণের জন্য তাদের একটি ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বিশ্বের উষ্ণায়নের সাথে, গলে যাওয়া পারমাফ্রস্ট এই অঞ্চলগুলোর স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, এবং নিকটবর্তী জনবসতি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে পড়ে। কানাডায়, এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে। কুইবেকের নুনাভিক এলাকাটি অনেক বছর আগে পারমাফ্রস্ট গ্রাউন্ডে নির্মিত হয়েছিল। গত কয়েক দশকে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অভ্যন্তরীণ স্তরের বরফ গলতে শুরু করে, কাদা ধসের পরিমাণ এবং অন্যান্য বিপদ বৃদ্ধি পায়। অদূর ভবিষ্যতে এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর মানিয়ে নেওয়ার জন্য ‘সর্বাধিক ১০-৩০ বছর’ আছে।
রেম্যা বলেছেন যেহেতু পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় হিমালয় অঞ্চলে এখনও এই ধরনের হিমবাহ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি তাই এই অঞ্চলের পারমাফ্রস্টের অবস্থান জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি এবং তার দল স্যাটেলাইট ছবি অধ্যয়ন করেছেন এবং শিলা হিমবাহ শনাক্ত করতে ঝিলম অববাহিকা পরিদর্শন করেছেন। তারা ৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ২০৭ টি শিলা হিমবাহের চারপাশে ‘পারমাফ্রস্ট জোনেশন ম্যাপ’ তৈরি করেছেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে এগুলোর নামকরণ করা হয়। গবেষকরা দেখেন যে কাশ্মীর উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে হিমবাহ গলে যাচ্ছে এবং শিলা হিমবাহে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা যে কোনও অঞ্চলে হিমবাহের চূড়ান্ত পর্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়। তারা আরও বলেন যে শিলা হিমবাহগুলো ভবিষ্যতে আরও সাধারণ পর্বত ভূমিরূপ হয়ে উঠবে, কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ণ এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার সাথে সাথে গলিত হিমবাহগুলোতে ধ্বংসাবশেষের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। এটি, গবেষকদের মতে, ইতিমধ্যেই ঝিলাম অববাহিকায় ধ্বংসাবশেষে আচ্ছাদিত হিমবাহে প্রত্যক্ষ করা গেছে।