এক পশলা বৃষ্টির পর বাতাস পরিষ্কার হয়ে যায়, ধূলিকণা, পরাগ রেণু আমাদের চারপাশের বায়ু থেকে ধুয়ে যায় আর হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে তোলে। কিন্তু কখনও কখনও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উল্টো ঘটনাও ঘটে। ক্রমবর্ধমান প্রমাণ থেকে জানা যায় যে বৃষ্টি এবং ঝড় হাঁপানির আক্রমণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ২০১৬ সালে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টির কারণে ৮৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হাঁপানির জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল আর এই ঘটনাটি মেলবোর্ন এপিডেমিক থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা ইভেন্ট হিসাবে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করছেন কীভাবে ঝড়ের কারণে হাঁপানির উপসর্গগুলো বৃদ্ধি পায়। জিওহেলথ-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় গবেষকরা ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শীতের মাস বাদে বছরের অন্য সময়ে নিউ ইয়র্ক স্টেটে বৃষ্টিপাতের ফলে যে সব মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত হয় তাদের তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছেন যে ঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতে গুরুতর হাঁপানি আক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ব্রিঘাম এবং মহিলা হাসপাতালের অ্যালার্জি এবং ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ ক্যামেলিয়া হার্নান্দেজ বলেছেন, বিভিন্ন কারণে হাঁপানির আক্রমণ হতে পারে যেমন ফুলের রেণু, তাপমাত্রার পরিবর্তন বা আর্দ্রতা এবং এ সবই ভারী বৃষ্টিপাত বা ঝড়বৃষ্টির কারণে হতে পারে।
ঝড়বৃষ্টির সময় বায়ুমণ্ডলে শীতল বাতাস পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছে উষ্ণ, আর্দ্র বাতাসের উপর ভাসতে থাকে, আর উষ্ণ বায়ু দ্রুত ওপরের দিকে উঠে যায় এবং শীতল বাতাসকে মাটির দিকে ঠেলে দেয়। উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠে শীতল হতে শুরু করে ও মেঘ এবং জলের ফোঁটায় ঘনীভূত হয়। নীচের দিকে নেমে আসা ঠান্ডা বাতাস চাপ বাড়িয়ে তোলে এবং যেহেতু বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে অগ্রসর হয়, এই পার্থক্যটি স্থল বরাবর একটি শক্তিশালী বাতাস তৈরি করে। সেই বাতাসে ফুলের রেণু, ছত্রাকের স্পোর এবং বায়ু দূষণকারী উপাদান মিশে যায়। বর্ধিত আর্দ্রতা হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাস-প্রশ্বাসকেও প্রভাবিত করতে পারে। শ্বাস ছাড়ার সময় আমাদের ফুসফুস সংকুচিত হয় এবং আকারে হ্রাস পায়। কিন্তু হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাইপার রেসপন্সিভ এয়ারওয়েজ থাকে যা দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্ফীত হয়। এই প্রদাহ আমাদের শ্বাসযন্ত্র থেকে বাতাসকে বের হতে বাধা দেয়। এবং আর্দ্রতা পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তোলে কারণ পূর্বে বিদ্যমান প্রদাহের ফলে মানুষ ঘন আর্দ্র বাতাসে শ্বাস নিতে পারে না এবং হাঁপানির আক্রমণের সূত্রপাত হয়। অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী টেমিলায়ো আদেয়ের মতে বৃষ্টি বা আর্দ্রতা পরাগ রেণুকে শিক্ত করে ও সেগুলো ছোটো ছোটো কণাতে ভেঙে দেয় আর বাতাসে সেগুলো ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে অ্যালার্জেনিক অ্যারোসল যা হাঁপানির আক্রমণকে বৃদ্ধি করে তা বাতাসে বেড়ে যায়। হার্নান্দেজের মতে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের প্রদাহ বা শ্বাসযন্ত্রের রোগের কারণে বাতাসে যে কোনো ধরনের ধূলিকণা বা বায়ু দূষণকারী উপাদান হাঁপানি বৃদ্ধি করতে পারে আর তাই রোগীকে এই ধরনের ঝড় বা বৃষ্টিপাতের আগে সতর্ক থাকতে হবে।