পরিবেশগত পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং রোগজীবাণুর বিস্তার কী সংযুক্ত? উত্তরটি একটা ধাঁধার মতো। বার্লিনের কিছু গবেষক এই ধাঁধার একটি অংশ বর্ণনা করেছেন eLife নামে একটি জার্নালে যেখানে তারা বলেন যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেনফরেস্ট অঞ্চল হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশা প্রজাতির বৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। একই সাথে, মশার আরও সহিষ্ণু প্রজাতিরা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা আরও বেশি সংখ্যায় ভাইরাস ছড়াচ্ছে। গবেষণাটিতে ভাইরোলজি এবং জীববৈচিত্র্য গবেষণার ক্ষেত্রগুলো একত্রিত করা হয়েছে এবং চ্যারিটের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন অফ আরবোভাইরাস রিসার্চ গ্রুপের প্রধান অধ্যাপক সান্দ্রা জাংলেন এর নেতৃত্ব দেন।
একটি সুস্থ স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র, যেমন একটা রেনফরেস্টে, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ হল সেখানে বিস্তৃত পরিসরে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণীর প্রজাতি রয়েছে যারা ভাইরাস বহন করতে পারে, হোস্ট হিসেবে কাজ করে। বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন হলে, এর প্রভাব ভাইরাসের উপরও পরে। জংলেন ব্যাখ্যা করেন যে তারা ন্যূনতমভাবে বিঘ্নিত আবাসস্থল থেকে ৪৯ টি ভাইরাস প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন যা বিবিধ হোস্টের উপর নির্ভর করে। এই ভাইরাস প্রজাতির বেশিরভাগই অধ্যয়ন করা এলাকায় তুলনামূলকভাবে বিরল ছিল কিন্তু এদের মধ্যে ৯ টি প্রজাতি সাধারণভাবে একাধিক আবাসস্থলে পাওয়া গেছে, এবং ৫টি ভাইরাস প্রজাতির প্রাদুর্ভাব এমন আবাসস্থলে বৃদ্ধি পেয়েছে যে জায়গায় মানুষের বসতির জন্য প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও পরিসংখ্যান অনুসারে মানুষের সংখ্যা সেখানে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেনফরেস্টগুলো পরিষ্কার করার ফলে মশার প্রজাতি জুড়ে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়, যা হোস্টের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনে। কিছু সহিষ্ণু মশার প্রজাতি পরিষ্কার করা এলাকায় খুব সফলভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি করেছে, তাদের সাথে তাদের ভাইরাসও নিয়ে এসেছে। গবেষকের মতে যদি একটি হোস্ট প্রজাতি খুব বেশি সংখ্যায় হয় তবে ভাইরাস সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে সমস্ত ভাইরাস বেশি সাধারণ বা সহজেই পাওয়া যায় বলে মনে করা হচ্ছে সেগুলো একটি নির্দিষ্ট মশার প্রজাতির মধ্যে উপস্থিত ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ভাইরাস বিভিন্ন গোত্রের অন্তর্গত এবং তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট যে ভাইরাসের বিস্তা্রে জিনগত কারণের থেকে তাদের হোস্টের বৈশিষ্ট্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই মশাদের অভিযোজন করার ক্ষমতাও জরুরি। জংলেনের মতে গবেষণায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে জীববৈচিত্র্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং জীববৈচিত্র্যের হ্রাসের ফলে নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিস্তারও অনেক সহজেই হয়।