জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানব মৃত্যুর হারের উপর ১৮০ টি নিবন্ধের সাম্প্রতিক পর্যালোচনা একটি গভীর উদ্বেগজনক সংখ্যা জানিয়েছে। অনুমান অনুযায়ী, পরবর্তী শতাব্দী নাগাদ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে এক বিলিয়ন অর্থাৎ ১০০ কোটি বা তার বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। বেশিরভাগ ভবিষ্যদ্বাণীর মতো, এটি বেশ কয়েকটি অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হল ‘১০০০-টন নিয়ম’ নামে পরিচিত একটি সাধারণ নিয়ম। এই রূপরেখার অধীনে, প্রতি হাজার টন কার্বন মানুষ যা পোড়ায় তা পরোক্ষভাবে ভবিষ্যতে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য দায়ী। যদি পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লবের আগের গড় তাপমাত্রা থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে থাকে তবে এর কারণে ইতিমধ্যেই অনেক প্রাণ হারিয়েছেন। এখন থেকে প্রতি ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য, বিশ্ব প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুর শিকার হতে পারে। কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ জোশুয়া পিয়ার্স ব্যাখ্যা করেছেন, যদি ১০০০-টন নিয়মের বৈজ্ঞানিক ঐক্যমতকে গুরুত্ব সহকারে দেখা যায় তাহলে মানুষের কার্যকলাপের ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং পরবর্তী শতাব্দীতে একশো কোটি অকাল মৃত্যু ডেকে আনবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রতি বছর, পরিবেশগত কারণগুলি প্রায় ১৩ মিলিয়ন মানুষের জীবন নেয়, এবং এখনও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কতজন মারা গেছে তা স্পষ্ট নয়। সমস্যার একটি বড়ো অংশ হল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বহুগুণ। ফসলের আকাল, খরা, বন্যা, চরম আবহাওয়া, দাবানল এবং ক্রমবর্ধমান সমুদ্র সবই সূক্ষ্ম এবং জটিল উপায়ে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে থাকছে। জলবায়ু মডেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি থেকে এটি স্পষ্ট যে আমাদের ক্রমবর্ধমান পরিবেশের ক্ষতিকারক ক্রিয়াকলাপের জন্য আমরা শিশুদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্ষতি করে চলেছি। এই বিষয়টি বোঝানোর জন্য, পিয়ার্স এবং পার্নকাট অস্ট্রেলিয়ার আদানি কারমাইকেল কয়লা খনিতে ১০০০-টন নিয়ম প্রয়োগ করে বলেছেন, এই বড়ো কয়লাখনির মজুদ কয়লা পুরোটাই পুড়ে গেলে ভবিষ্যতে প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হবে। তবুও প্রযুক্তিগতভাবে, ১০০০-টন নিয়ম সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তনের নানা দিক বিবেচনা করে নি, যেমন কার্বন নির্গমন ভবিষ্যতে পরিবেশের ক্ষতি আরও খারাপ, এমনকি দ্রুততর করে তুলতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, যদিও এটি একটি কঠিন বাস্তব, তবে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারকদের এই সত্যের মুখোমুখি হওয়া দরকার। এই পর্যালোচনাটি এনার্জিতে প্রকাশিত হয়েছিল।