জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য এক অন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য এক অন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে।

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্বব্যাপী ১৬০০ অঞ্চলের তথ্য অধ্যয়ন করে পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে) গবেষকদের অনুমান উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মতো উন্নত দেশে মানুষের আয় খুব হ্রাস পেতে পারে, আর এই আয় হ্রাস সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকায়। পিআইকে বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রথম লেখক ম্যাক্সিমিলিয়ান কোটজ বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষি ফলনে, শ্রম উৎপাদনশীলতা বা পরিকাঠামোর ওপর পড়বে যে সূচকগুলো সরাসরি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক জলবায়ু সিমুলেশন (CMIP-6) এর সাথে অভিজ্ঞতামূলক মডেলগুলোকে একত্রিত করে জলবায়ুর প্রভাব মূল্যায়ন করেছেন তার সাথে কীভাবে জলবায়ুজনিত প্রভাবগুলো অতীতে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে তাও বিবেচনা করেছেন। সামগ্রিকভাবে, বিশ্বব্যাপী বার্ষিক ক্ষতি অনুমান করা হয়েছে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০৫০ সালে ১৯-৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। এই ক্ষতিগুলো প্রধানত ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে ঘটবে, তবে ঝড় বা দাবানলের মতো অন্যান্য উপাদান যুক্ত হলে আবহাওয়ার জন্য ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে। এই স্বল্পমেয়াদী ক্ষতিগুলোর নেপথ্যে রয়েছে আমাদের অতীতে অতিরিক্ত কার্বন নির্গমন। যদি আমরা এর অন্তত কিছুটা এড়াতে চাই তাহলে আমাদের আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমাদের কার্বন নির্গমন অবিলম্বে তীব্রভাবে কমাতে হবে, তা নাহলে এই শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও বড়ো আকার ধারণ করবে। ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গড়ে ৬০% পর্যন্ত ক্ষতি হবে। এর থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় জীবনহানি বা জীববৈচিত্র্যের প্রভাব বিবেচনা না করা হলেও শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণের জন্যই জলবায়ু রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকদের অধ্যয়নে জলবায়ু প্রভাবের ফলে বিশ্বব্যাপী অসাম্যকে তুলে ধরা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, প্রায় সর্বত্রই ক্ষয়ক্ষতি দেখা যাবে, কিন্তু গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ সেই স্থান অবস্থানগত কারণে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট উষ্ণ। আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সেইসমস্ত অঞ্চল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে দেশগুলো সবচেয়ে কম দায়ী সেইসমস্ত দেশের মানুষের আয় উচ্চবিত্ত দেশগুলোর তুলনায় ৬০% বেশি এবং উচ্চ নির্গমনকারী দেশগুলোর তুলনায় ৪০% বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য তাদের কাছে সংস্থানও খুব কম রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, আমরা বর্তমানে যে পথে ধরেছি, তা আমাদের বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমাদের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার দিকে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন যা ভবিষ্যতে আমাদের অর্থ সাশ্রয় করবে। পটসডাম ইনস্টিটিউটের অ্যান্ডার্স লেভারম্যান বলেছেন, যদি আমরা জ্বালানী তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়ানো বন্ধ করি তবেই গ্রহের তাপমাত্রা স্থিতিশীল হতে পারে।