অনেক সময় পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকালে আমাদের চোখের সামনে মাকড়সার জালের মতো সুতো ঝুলতে থাকে। এগুলো ফ্লোটার বা ডাক্তারি পরিভাষায় মাস্কি ভলিটানেটস নামে পরিচিত।
ফ্লোটার হওয়ার পিছনে মূল কারণ বয়স। বয়সের সাথে সাথে, চোখের ভিতরে একটি পরিষ্কার, জেলের মতো পদার্থ ভিট্রিয়াস, ঘন এবং সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। ভিট্রিয়াসে বেশিরভাগ জল, কোলাজেন এবং হায়ালুরানান নামে একটা অ্যাসিড থাকে। সময়ের সাথে সাথে, ভিট্রিয়াস কিছুটা ক্ষয় হয় এবং কোলাজেনের ছোটো ছোটো গুচ্ছ তৈরি হতে শুরু করে। ফ্লোটারগুলি হল ছায়ার মতো যা এই কোলাজেনের গুচ্ছ রেটিনায় নিক্ষেপ করে। বয়স হওয়ার সাথে সাথে ভিট্রিয়াস, চোখের পিছন থেকে সরে যেতে থাকে, আর তত বেশি ফ্লোটার সৃষ্টি হতে থাকে।
এই ভিট্রিয়াসকে কীভাবে সুস্থ রাখা যায়, কোলাজেন গুচ্ছ কমানো যায়, তা নিয়ে ২০২২ সালে তাইওয়ানের গবেষকরা বলেছিলেন উচ্চ মাত্রায় নানা রকম ফলের এনজাইমের গুণসম্পন্ন সাপ্লিমেন্ট খেলে তা ফ্লোটার কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু তাদের গবেষণায় ফ্লোটারের সংখ্যা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল তা নিয়ে বিশেষ স্পষ্টতা না থাকাতে এই রিপোর্টের বক্তব্য পুরোপুরি গ্রহণ করা যায়নি।
ফ্লোটারের সংখ্যা নির্ধারণ বেশ কঠিন, কারণ চোখ নাড়ালেই ভিট্রিয়াস সমানে নড়তে থাকে, তার সাথে চোখে যে ছায়া পড়ে ফ্লোটার তৈরি হচ্ছে, তাও নড়ে যায়। ভিট্রিয়াসে কোলাজেনের ছোটো গুচ্ছ দ্বিমাত্রিক নয়, ওগুলো ত্রিমাত্রিক হওয়াতে বিভিন্ন কৌণিক অবস্থানে যখন তা মাপা হয়, তখন তার মাপ আলাদা আলাদা আসে, আর চোখের যত সামনে আসে তত ফ্লোটারের আকার বড়ো হতে থাকে। জীবনযাত্রার ধরনও চোখের বার্ধক্য ধীর বা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে, এর সাথে কত সংখ্যক ফ্লোটার, কতো বড়ো আকারের দেখা যাচ্ছে, তাও নির্ভর করে। ভিট্রেকটোমি বা চোখের লেসার করে ফ্লোটার হওয়া থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ভিট্রেকটোমির ক্ষেত্রে অপারেশনে চোখের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট কম্পিউটার এবং এলসিডি স্ক্রিন থেকে নীল আলোর অত্যধিক এক্সপোজার বয়স-সম্পর্কিত চোখের পরিবর্তনগুলিকে ত্বরান্বিত করে। এ বিষয়ে সচেতন থেকে, পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে, ক্যারোটিনয়েডযুক্ত সবজি, যেমন পালংশাক, ব্রকলি, তরমুজ, গোলাপি আঙুর এবং ওমেগা-৩ যুক্ত তেলওয়ালা মাছ গ্রহণ করলে, তা বয়সজনিত পেশির ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।