সকালে উঠে গরম চায়ে চুমুক না দিলে আমাদের ঘুমের রেশ কাটে না। আবার অফিসে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই এক-দু’ কাপ চা আমাদের চাই। আর সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ চায়ের আড্ডা না হলে তো দিনটাই কেমন যেন খালি খালি লাগে। এই চা নিয়ে চলেছে বহু গবেষণা। আমরা সাধারণত ভাবি যে এক কাপ ভালো চায়ের স্বাদ মূলত নির্ভর করে আমরা কীধরনের চায়ের পাতা ব্যবহার করেছি তার উপর। সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে সুস্বাদু এক কাপ চা অন্য একধরনের উপাদানের উপর নির্ভর করে- চা গাছের শিকড়ে পাওয়া অণুজীবের সংগ্রহের উপর। এই আণুবীক্ষণিক জীবের সংগ্রহে পরিবর্তন এনে ভালো মানের চাকে আরও ভালো করা যেতে পারে।
চিনের ফুজিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটির টংদা জু বলেছেন, অণুজীব সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য বিভিন্নতা, বিশেষ করে নাইট্রোজেন বিপাক-সম্পর্কিত অণুজীব, চা গাছের শিকড়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উচ্চ-মানের চা গাছের শিকড় থেকে একটি সিন্থেটিক মাইক্রোবিয়াল সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে, আবার সংযুক্ত করে গবেষকরা বিভিন্ন চা গাছে অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে চায়ের গুণমান উন্নত হয়েছে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে উদ্ভিদের শিকড়ে বসবাসকারী মাটির জীবাণু উদ্ভিদের মধ্যে পুষ্টি গ্রহণ এবং ব্যবহার করার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। নতুন এই গবেষণায়, গবেষকরা বুঝতে চেষ্টা করেছেন কীভাবে গাছের শিকড়ে এই অণুজীবের জগত চায়ের গুণমানকে প্রভাবিত করে। তারা দেখেন এই অণুজীব চা গাছের শিকড়ের অ্যামোনিয়া গ্রহণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে থেনাইন উৎপাদন প্রভাবিত হয়, যা আবার চায়ের স্বাদ নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা উপনিবেশকারী জীবাণুরও বৈচিত্র দেখেছিলেন। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, মাটিতে বিশেষত নাইট্রোজেনের ঘাটতি থাকলে সেই মাটিতে কৃত্রিমভাবে উত্পাদিত জীবাণু সম্প্রদায় চায়ের মান উন্নত করতে পারে। যেহেতু চা গাছে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন প্রয়োজন হয়, তাই এই আবিষ্কারটি চা গাছের গুণমানকে উন্নত করার লক্ষ্যে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফলাফলগুলো আরও বিস্তৃতভাবে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।