প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে, জাপানের মহাকাশযান, চাঁদে রাত কাটানোর পর আবার জেগে উঠেছে, বিজ্ঞানীদের ডাকে সাড়াও দিয়েছে। গত মাসে চাঁদের বিষুবরেখার কাছে নেমে ছিল জাপানের মহাকাশযান। জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা দাবি করে, ‘স্লিম’ সফল ভাবে চাঁদে পৌঁছেছে যদিও তার অবতরণে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। চাঁদে পৌঁছে সূর্যের আলোর মাধ্যমে কাজ করতে পারছিল না ‘স্লিম’। যন্ত্রের মধ্যে থাকা সোলার প্যানেলগুলো সূর্যালোকের উল্টো দিকে ঘুরে গিয়েছিল। ফলে কাজ এগোয়নি। চাঁদে ১৪ দিনের দীর্ঘ রাত কাটানোর পর আবার পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। রবিবার, জাপানের স্পেস এজেন্সি অনুসারে, চাঁদে তদন্তের জন্য স্মার্ট ল্যান্ডারে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল, এবং একটি প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, চাঁদে রাত কাটানোর পরেও তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। চাঁদের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ল্যান্ডারের যন্ত্রগুলো আবার সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে জাপান। ওই যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে তারা আবার অনুসন্ধান চালাবে চাঁদের মাটিতে। স্লিম চন্দ্র পৃষ্ঠের গভীর ঠান্ডা রাতের সঙ্গে লড়াই করার মতো করে তৈরি হয়নি কারণ সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যায়। জাক্সার প্রকৌশলীরা অবশ্য আশাবাদী ছিলেন। স্লিমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিনিচিরো সাকাই বলেন ল্যান্ডারের যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনবোর্ড কম্পিউটার এবং সোলার প্যানেল কাজ করছে। জাক্সা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছে যে এটি পাথরের গঠন অধ্যয়নের জন্য ব্যবহৃত একটি মাল্টিব্যান্ড স্পেকট্রোস্কোপিক ক্যামেরা দিয়ে নতুন ছবি তোলার চেষ্টা করছে।
স্লিমের জন্য অভিযানটি মোটেও সহজ ছিল না। সফলভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় অবতরণ সত্ত্বেও, কিছু দিনের জন্য স্লিমের সাথে জাক্সার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চাঁদে রাত নামার আগে এটি তার অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে একটি ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। স্লিমের জন্য পরবর্তী সূর্যাস্ত বৃহস্পতিবার ঘটবে। চন্দ্র দিবসে, প্রচণ্ড তাপ স্লিমের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর রেডিও ইলেকট্রনিক্স খুব দ্রুত গরম হয়ে যায় তাই বৈজ্ঞানিক তদন্ত পুনরায় শুরু করার আগে সপ্তাহের শেষের দিকে তাপমাত্রা ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ইলেকট্রনিক সার্কিট বোর্ডগুলো যখন খুব গরম বা ঠান্ডা হয়ে যায় তখন কাজ করতে পারে না, কারণ সেগুলো বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং উপকরণগুলোর সংকোচনের হার আলাদা, ফলত এদের মধ্যে ফাটল দেখা দিতে পারে বা ভেঙে যেতেও পারে। গত বছরের ২৩ অগস্ট চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল ভারত। ইসরোর বিক্রম ল্যান্ডার এবং রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে নানা গবেষণা চালিয়ে চন্দ্রদিবসের শেষে ‘ঘুমিয়ে পড়ে’। ১৪ দিনের দীর্ঘ রাত কাটানোর পর ইসরোর ল্যান্ডারকে আর জাগানো যায়নি। সেই কাজটিই করে দেখাল পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান।