ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকদের নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, কফি, কোকো, তরমুজ এবং আমের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফসল পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের ক্ষতির কারণে সংকটের সম্মুখীন। গবেষণায় দেখা গেছে পরিবর্তিত জলবায়ু এবং ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন মূল গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফসলের পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস করেছে। এই পতনের মূল কারণগুলো হল আবাসস্থল ধ্বংস, ভূমির ভুল ব্যবহার যেমন পশুচারণ, সার ব্যবহার এবং একরকম শস্যের চাষ, উচ্চ কীটনাশক ব্যবহার। ২৬৭৩ টি সাইট এবং ৩০৮০ টি পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের প্রজাতির ডেটাসেট ব্যবহার করে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষি কর্মকাণ্ডের সম্মিলিত চাপ পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গদের বড়ো রকম হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমীক্ষায়, গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন যে ২০৫০ সাল পর্যন্ত পরাগায়ন-নির্ভর কোন ফসলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখোমুখি, তাতে দেখা গেছে ক্রান্তীয় অঞ্চলে পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গ হ্রাস সর্বাধিক, ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে উদ্ভিদের পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের সংখ্যা ৬১ শতাংশ কমেছে। পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের সংখ্যা হ্রাস থেকে ফসল উৎপাদনের সর্বোচ্চ ক্ষতির ঝুঁকি সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পড়বে। সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ মোট উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল এবং ফিলিপাইন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে অনুসারে ফিলিপাইনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ফসলের মধ্যে, কোকো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখোমুখি বিশেষত আফ্রিকাতে, ভারতের আম এবং চীনের তরমুজ এরপর ঝুঁকির সম্মুখীন।
ইউনাইটেড স্টেট অফ এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের মতে, বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ ফুলের গাছ এবং বিশ্বের খাদ্য শস্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ পরাগায়নকারীদের উপর নির্ভর করে। পরাগায়নকারীরা মধু, পরাগের সন্ধানে ফুলে পরিদর্শন করে। ফুলে খাদ্য সংগ্রহের সময়, তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলের প্রজনন অংশগুলোয় ঘষা লাগতে থাকে আর অজান্তে ফুল থেকে ফুলে পরাগ জমা করে। আর ফল বা বীজ তৈরি করতে উদ্ভিদের পরাগ লাগে।
পরাগায়নকারীর ক্ষতির জন্য উৎপাদন ঝুঁকিতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দুর্বল কিছু মানুষের আয়ের নিরাপত্তাহীনতা বাড়াতে পারে এবং পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের হ্রাস এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষকদের আয়ের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষার ফলাফল পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের ক্ষতি এড়াতে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনগুলিকে ধীর করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নেওয়ার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেয়।