হীরা তৈরি করতে কিছু জিনিস লাগে, প্রথমত কার্বন, তারপর ভূত্বকের নীচে অনেক গভীরে চাপ এবং তাপ প্রয়োজন। অবশেষে অন্তত বিলিয়ন বছর সময় লাগে, , যখন প্রকৃতি তার কাজ করতে থাকে এবং তারপর গ্রহের পৃষ্ঠের কাছাকাছি কোথাও হীরাগুলো ছুঁড়ে দেয়। এতে যা তৈরি হয় তা হল সাধারণ হীরা। কিন্তু আপনি যদি বিরল গোলাপি হীরা চান তবে আরও কিছু কারণের প্রয়োজন, যার সবগুলি এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় নি। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে গবেষণায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যে এই অনন্য রত্নগুলি কীভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পাওয়া যায়। তারা বলছেন, গোলাপি হীরার জন্য টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের চাপ, মহাদেশগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় প্রসারণ প্রয়োজন হয়। এই প্রচণ্ড টান ম্যান্টলের গভীরতা থেকে গোলাপি হীরাকে টেনে ওপরের দিকে নিয়ে আসে, মানুষ উপরের দিকে খুঁড়ে এইসব হীরা আবিষ্কার করে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত পূর্ব কিম্বারলি অঞ্চলের আর্গিল খনি বিশ্বের গোলাপি হীরার ৯০ শতাংশ সরবরাহ করেছিল যা, ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ হীরা বিশেষ বিরল না হলেও, গোলাপি হীরা বিশ্বের বিরলতম রত্নগুলোর মধ্যে একটা। হলুদ বা নীল হীরা অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি দ্বারা রঙিন হয় । কিন্তু গোলাপী হীরা সাদা হীরার মতো রাসায়নিকভাবে বিশুদ্ধ। গোলাপি হীরা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় কিনা তা জানার জন্য, অলিরুক এবং তার সহকর্মীরা খনি থেকে পাথরের উপর ভূ-ক্রোনালজিকাল কৌশল ব্যবহার করে খনিজ জমার বয়স সনাক্ত করেছিলেন।
গোলাপি হীরা পাওয়া যায় এমন শিলাগুলোর বিভিন্ন অংশে গবেষকরা প্রাপ্ত অ্যাপাটাইট এবং জিরকনে ইউরেনিয়ামের অনুপাত দেখেছিলেন। এই শিলাগুলোতে খুব অল্প পরিমাণে ইউরেনিয়াম এবং কখনও কখনও থোরিয়াম থাকে, যা সময়ের সাথে সাথে সীসা এবং হিলিয়ামে পরিণত হয়। এই খনিজগুলিতে ইউরেনিয়াম এবং এর ক্ষয় পণ্যের অনুপাত পরিমাপ করে, বিজ্ঞানীরা শিলা গঠনের সঠিক বয়স নির্ধারণ করতে পারেন। রিও টিন্টো দ্বারা সরবরাহ করা পাথরের উপর মানুষের চুলের প্রস্থের চেয়ে কৃশ লেজার রশ্মি ব্যবহার করে তারা আর্গিলের বয়স দেখেছেন, ১.৩ বিলিয়ন বছর। যা পূর্বের ধারণার চেয়ে ১০০ মিলিয়ন বছর পুরানো। অর্থাৎ প্রাচীন সুপারমহাদেশ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এটা গঠিত হয়েছিল।
আর্গিল যেখানে অবস্থিত যেখানে কিম্বারলি এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ার বাকি অংশগুলোর বহু বছর আগে একসাথে ধাক্কা লেগেছিল। এই ধরণের সংঘর্ষের ফলে ভূমিতে একটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বা ‘দাগ’ তৈরি হয় যা কখনই পুরোপুরি নিরাময় হয়না। যদিও পরে গঠিত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ তাতে ভেঙ্গে যায়নি, কিন্তু আর্গিল যেখানে অবস্থিত সেই স্থান প্রসারিত হয়েছিল, যাতে পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়েছিল তাতে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে উঠতে পারে এবং তার সাথে গোলাপি হীরা নিয়ে আসতে পারে।
এটা বিজ্ঞানীদের গোলাপী হীরার গঠন প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে, আরও কোথায় গোলাপি হীরা পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের সূত্র দেয়। এই খোঁজা সহজ নয়, তবে পৃথিবীর সমস্ত হীরা আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে পাওয়া যায়। মনে করা হচ্ছে গভীর ভূগর্ভ থেকে রত্ন পরিবহনের জন্য ম্যাগম্যার বিচ্ছুরণ প্রয়োজন। গবেষকরা বলছেন যে, বেশিরভাগ হীরাই প্রাচীন মহাদেশের কেন্দ্রে পাওয়া যায়, যেখানে আগ্নেয়গিরির অঞ্চলগুলো পৃষ্ঠের উপর উন্মুক্ত। এই গবেষণা নেচারে প্রকাশিত হয়েছে।