মানুষের কোশে সাধারণত ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে; অতিরিক্ত ক্রোমোজোম থাকা বা একটি ক্রোমোজম কম থাকা উভয় ক্ষেত্রেই এটা একটা অসঙ্গতি যা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যানিউপ্লয়েডি নামে পরিচিত। ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের সার্জারির সহকারী অধ্যাপক জেসন শেলজার বলেছেন যে স্বাভাবিক ত্বক বা স্বাভাবিক ফুসফুসের কলাতে ৯৯.৯৯% কোশেই সঠিক সংখ্যক ক্রোমোজোম পাওয়া যাবে কিন্তু বহু বছর ধরে দেখা গেছে যে প্রায় সব ক্যান্সারই অ্যানিউপ্লয়েড। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত ক্রোমোজোম ঠিক কী ভূমিকা পালন করে তা অজানা। শেলজারের মতে দীর্ঘ সময় ধরে অ্যানিউপ্লয়েডি দেখা গেছে কিন্তু সঠিক সরঞ্জামের অভাবে তার পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই গবেষণায়, ক্যান্সার কোশ থেকে সম্পূর্ণ ক্রোমোজোমের অংশ নির্মূল করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি, জিন-ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনি্ক, CRISP-এর, ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।
নতুন এই পদ্ধতি যার নাম দেওয়া হয়েছে, রিস্টোরিং ডিসোমি ইন অ্যানিউপ্লয়েড সেলস ইউসিং CRISPR টার্গেটিং বা ReDACT ব্যবহার করে গবেষকরা মেলানোমা, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং ডিম্বাশয়ের কোশে অ্যানিউপ্লয়েডিকে চিকিৎসা করেছেন। বিশেষত, তারা ক্রোমোজোম ১-এর দীর্ঘ অংশের একটি অস্বাভাবিক তৃতীয় প্রতিলিপি বাদ দেন – যা “q arm” নামেও পরিচিত। এই অংশটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে দেখতে পাওয়া যায়, এবং এটি ক্যান্সার রোগের অগ্রগতির সাথে যুক্ত। সচরাচর এটি ক্যান্সারের প্রথম দিকেই ঘটে। ক্যান্সার কোশের জিনোম থেকে অ্যানিউপ্লয়েডি বাদ দেওয়ায় কোশগুলো টিউমার গঠনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে, গবেষকরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে ক্যান্সার কোশের একটি “অ্যানিউপ্লয়েডি এড্ডিকশন” থাকতে পারে। ঠিক যেমন পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে অনকোজিন (যা একটি কোশকে ক্যান্সার কোশে পরিণত করতে পারে) নির্মূল করলে ক্যান্সারের টিউমার গঠনের ক্ষমতা হারিয়ে যায় আর তাই বলা হয় যে ক্যান্সারের “অনকোজিন এড্ডিকশন” থাকতে পারে।
শেলজার আরও বলেন যে প্রায় সমস্ত ক্যান্সারই অ্যানিউপ্লয়েড। তাই যদি সেই অ্যানিউপ্লয়েড কোশগুলো বেছে নেওয়ার কিছু উপায় থাকে তবে তা অন্যান্য স্বাভাবিক, ক্যান্সার নেই এমন কলাতে ন্যূনতম প্রভাব ফেলে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিপন্ন হবে।