১৯৫০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৪৯ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭১.৭ বছর হয়েছিল। কিন্তু ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে কোভিড-19 মহামারীর প্রথম দুবছরে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ১.৬ বছর কমেছে, অর্থাৎ পূর্বে যা অনুমান করা হয়েছিল তার চেয়ে মানুষের আয়ুর ওপর কোভিডের বেশি প্রভাব পড়েছে। আমেরিকার ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর তথ্য অনুসন্ধানকারী শত শত গবেষকদের সমীক্ষা অনুসারে বিশ্বব্যাপী মানুষের আয়ুষ্কালের এক দশক যাবত দীর্ঘ বৃদ্ধি এই রোগ উলটে দিয়েছে। প্রধান গবেষক অস্টিন শুম্যাখার-এর মতে কোভিড বিগত পঞ্চাশ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হানাহানির থেকেও বেশি ক্ষতি করেছে। ধনী দেশের মধ্যে ২০২০-২১ সালে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ইউরোপিয়ান দেশে। ২০২০-২১ সালের মধ্যে ২০৪ টা দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ দেশে আয়ু হ্রাস পেয়েছে। এই সময়ে ১৫ বছরের বেশি মানুষের মৃত্যুর হার পুরুষদের ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে তা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি আয়ু কমেছে মেক্সিকো সিটি, পেরু এবং বলিভিয়ায়।
২০২০-২১ সালে সরাসরি কোভিড ভাইরাস থেকে বা পরোক্ষভাবে মহামারী-সম্পর্কিত কারণে ১৫.৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৫৯ লক্ষ অতিরিক্ত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বের অনুমানের তুলনায় দশ লক্ষ অতিরিক্ত মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। মহামারী না থাকলে কতজনের আনুমানিক মৃত্যু হতে পারত, তার সাথে মোট মৃত্যুর সংখ্যা তুলনা করে অতিরিক্ত মৃত্যুর হিসাব করা হয়েছে। আইএইচএমই-র গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি-তে একটা ভালো দিক উঠে এসেছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু অনেকটা কমেছে। ২০২১ সালে ২০১৯ সালের তুলনায় পাঁচ লাখ শিশুর মৃত্যু কম হয়েছে, যাতে শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে।
সমীক্ষা দেখিয়েছে অনেক পুরোনো সচ্ছল দেশগুলোর জনসংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে, আবার কম ধনী দেশগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ছে। শুম্যাখারের মতে এই পরিবর্তন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, যেখানে অল্পবয়সী জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হচ্ছে সেখানে শ্রমিকের ঘাটতি এবং যেখানে জনসংখ্যার আকার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে সেখানে সম্পদের ঘাটতি দেখা যাবে। তার মতে বিশ্বজুড়ে দেশের মধ্যে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন দেশে অভিবাসনে সহযোগিতা করতে হবে।