স্নায়ুবিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক দশকে জানিয়েছেন প্রতিদিনের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ঘটনা ঘটার রাতেই আমাদের মস্তিষ্ক স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। এখন, এক নতুন গবেষণায় এমন একটি প্রক্রিয়ার কথা তারা বলেছেন যা নির্ধারণ করে কোন কোন স্মৃতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘুম তাদের স্থায়ী করে তোলার পূর্বে প্রক্রিয়াটি সে স্মৃতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ রূপে বিবেচনা করে চিহ্নিত করে রাখে। NYU গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা বলেন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোশ পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনে এবং স্মৃতিকে এনকোড করে এমন বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করে। মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের স্নায়ু কোশের গুচ্ছ এক এক মিলিসেকেন্ড অন্তর সংকেতের ক্রম তৈরি করে যা জটিল তথ্য এনকোড করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই ছন্দবদ্ধ চক্রকে নাম দিয়েছেন ‘সার্প ওয়েভ রিপলস’। গবেষকদের মতে এই সার্প ওয়েভ রিপলস হল মস্তিষ্কের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে কোন কোন অভিজ্ঞতা বা ঘটনা মনে রাখা উচিত আর কোনগুলো না মনে রাখলেও চলবে। নতুন এই গবেষণাটি একটি পরিচিত প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে: মানুষ সহ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজেদের চারপাশকে অনুভব করে বা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তারপর কয়েক মুহূর্ত বিরতি নেয়, তারপরে আবার কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তারপর আবার বিরতি নেয়। গবেষকদের মতে আমরা কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্ক একটি অলস বা আইডেল পুনঃমূল্যায়ন অবস্থায় চলে যায়। এই ধরনের ক্ষণস্থায়ী বিরতি সারা দিন ঘটতে থাকে তবে দীর্ঘতম অলস সময়কাল হল আমাদের ঘুমের সময়। গবেষকরা এও বলেছেন যে আমরা যখন সক্রিয় বা সচেতন থাকি তখন এই সার্প ওয়েভ রিপলস দেখা যায় না, শুধুমাত্র এই চক্রের আগে বা পরে নিষ্ক্রিয় বিরতির সময় এদের দেখা মেলে। বর্তমান সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই চক্র মস্তিষ্কের এই ধরনের বিরতির সময় মনে রাখার মতো ঘটনাগুলোর চিহ্নিতকরণ করে থাকে। ইঁদুর নিয়ে করা এই গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মৃতিগুলো মনে রাখা হয়, সেই অভিজ্ঞতার সময় সক্রিয় একই হিপ্পোক্যাম্পাসের নিউরনগুলো ঘুমের সময় আবার সক্রিয় হয়ে পড়ে এবং কোশগুলোর মধ্যে সংযোগকে শক্তিশালী করে। ঘুমের সময় সেই সব ঘটনা আমাদের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয় স্মৃতি রূপে।