ক্রমবর্ধমান সমুদ্রের তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। গ্লোবাল কোরাল রিল মনিটরিং নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, জলের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাড়লে সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীরের ৭০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি হতে পারে। প্রবাল হল পলিপ নামে প্রাণী যা প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলে পাওয়া যায়। এই নরম দেহের পলিপগুলো সমুদ্র থেকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট আহরণ করে বলিষ্ঠ বাহ্যিক খোলস তৈরি করে। এই শক্ত খোলস পরবর্তী সময়ে প্রবাল প্রাচীরের ভিত্তি তৈরি করে। এই প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রতলের মাত্র ০.২ শতাংশ জুড়ে থাকলেও, এটা এক চতুর্থাংশেরও বেশি সামুদ্রিক প্রাণীর বাসস্থান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবাল আজ বিপন্ন। সমুদ্র উষ্ণ এবং আম্লিক হয়ে উঠছে ফলে এই প্রাণীগুলো রোগ ও মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে প্রাচীরগুলি ২০৭০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে হ্রাস পেতে পারে। ফলে প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণ করা এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। । ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে ৪০ মাইল দূরে অ্যাব্রোলহস দ্বীপপুঞ্জের একজন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী টেরিন ফস্টার এমন একটি সিস্টেম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন যা তুলনামূলকভাবে দ্রুত এই প্রাচীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
প্রবাল প্রাচীর পুনরুদ্ধারের জন্য ফস্টার খাঁজের সাথে লাগানো ফ্ল্যাট ডিস্কের মতো আকৃতির ছাঁচযুক্ত বেস এবং একটি হ্যান্ডেল ডিজাইন করেছেন। চুনাপাথর ধরণের কংক্রিট থেকে এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রবালের টুকরোগুলোকে ছোট প্লাগে গ্রাফটিং করে এবং একটা ছাঁচে তৈরি বেসে ঢোকানো হয়। এই ফাউন্ডেশনগুলি তারপর সমুদ্রের তলদেশে স্থাপন করা হয়। ফস্টারের কোম্পানি কোরাল মেকার, একটা ইঞ্জিনিয়ারিং সফ্টওয়্যার ফার্ম, অটোডেস্কের সাথে অংশীদারিত্বে এই কাজ করছে। এই কাজ ত্বরান্বিত করতে এবং সীমিত রিফগুলি সংরক্ষণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের পাশাপাশি কাজ করার জন্য রোবট (কোবট) – কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোবটগুলোর লক্ষ্য প্রবাল প্রসারণে সহায়তা করা, প্রধানত ফোস্টারস মোল্ডেড ডিজাইন বাছাই করা এবং স্থাপন করা। এই ধরনের কাজ রোবটের জন্য বেশ উপযুক্ত কারণ এই মেশিনের বাহুগুলো প্রক্রিয়ার প্রয়োজন অনুসারে বীজের প্লাগগুলিতে প্রবালের টুকরোগুলিকে গ্রাফ্ট করতে পারে। অন্য আরেকটা রোবট ভিশন সিস্টেমের মাধ্যমে বেস স্থাপনে সহায়তা করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে রোবটগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকর করা যাবে।