প্রবাল হল এক প্রকার অমেরুদণ্ডী সামুদ্রিক প্রাণী। ছোট্ট ছোট্ট প্রবালকীট এক সঙ্গে জড়ো হয়ে প্রাচীর গড়ে তোলে। প্রবাল প্রাচীর সংলগ্ন ভূখণ্ডকে সামুদ্রিক ঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দ্বীপের চারপাশে গড়ে ওঠা এই সুন্দর, আঁকাবাঁকা প্রাচীর সমুদ্রের ঝোড়ো আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে আর এই প্রাচীর ঘিরেই গড়ে ওঠে বিভিন্ন প্রাণীর আশ্রয়স্থল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রবাল প্রাচীর নষ্ট হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। চরম আবহাওয়া যেমন অতিরিক্ত গরম বা অতি বৃষ্টি আরও সাধারণ হয়ে উঠেছে, উপকূলীয় সম্প্রদায়কে ঘন ঘন বন্যা এবং ক্ষয়ের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। পিএনএএস নেক্সাস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় মাস্যাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির একটি দল প্রাকৃতিক প্রবাল প্রাচীরের অনুকরণে কৃত্রিম প্রাচীর নির্মাণ করে উপকূলরেখাকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করার আশা রাখছে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করার সাথে সাথে মাছ বা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য ছোটো ছোটো আশ্রয়স্থল গড়ে তুলবে। প্রাচীরের নকশায় চারটি রডারের মতো কাঠামো রয়েছে যা একটি নলাকার কাঠামোর উপর ভিত্তি করে হয়েছে। দেখা গেছে এই কাঠামোটি সমুদ্রের ঢেউ রোধ করে ফলত ঢেউয়ের মোট শক্তির বেশিরভাগই, আনুমানিক ৯৫% -এরও বেশি নষ্ট হয়ে যায়। গণনা করে দেখা গেছে যে নতুন নকশাটি বিদ্যমান কৃত্রিম প্রাচীরের ১০ গুণ কম উপাদান ব্যবহার করে তরঙ্গ শক্তি হ্রাস করতে পারে। গবেষকরা টেকসই সিমেন্ট দিয়ে এই প্রাচীর এমনভাবে তৈরি করতে চেষ্টা করেছে যে মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর বসতি স্থাপনে সহায়তা করবে। ৬ মিটার উঁচু তরঙ্গ যদি এই প্রাচীর কাঠামোর দিকে ধাক্কা খায়, তবে তারা শেষ পর্যন্ত অন্য দিকে এক মিটারেরও কম উচ্চতায় পৌঁছবে। সুতরাং, এটি তরঙ্গের প্রভাবকে কমিয়ে ক্ষয় এবং বন্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। কিছু অঞ্চল ইতিমধ্যে তাদের উপকূলরেখাকে ঝড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কৃত্রিম প্রাচীর তৈরি করেছে। এই কাঠামোগুলো সাধারণত ডুবে যাওয়া জাহাজ, অকেজো তেল এবং গ্যাস প্ল্যাটফর্ম অথবা তৈরি করা কংক্রিট, ধাতু, টায়ার বা পাথরের কাঠামো। কিন্তু সেগুলো উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়া বিশাল তরঙ্গের শক্তিকে রোধ করতে আক্ষম, তার জন্য প্রচুর পরিমাণে সামগ্রী প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন যে এই কাঠামোগুলো প্রায় ১ মাইল লম্বা এবং প্রায় ৫ মিটার উঁচু হবে সুতরাং এটা খরচসাপেক্ষ। তবে সামুদ্রিক ঝড়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে কারণ আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করা একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।