শরীরে রক্ততঞ্চন হওয়া আমাদের স্বাভাবিকভাবে আত্মরক্ষার একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কোথাও কেটে গেলে যে রক্তপাত হয়, সেই স্থানে রক্ততঞ্চন হয়ে জমাট বেঁধে শরীরের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশকে আলাদা করে। কিন্তু যদি, প্রচুর রক্তপাত হয় তখন রক্ততঞ্চন হয়ে ওই স্থানে রক্ত জমাট বাঁধা সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে কৃত্রিম ব্যবস্থার সাহায্য দরকার পড়ে।
গবেষকরা এমন একটা পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছেন, যা জখম হওয়া স্থানে কোনো রকম ক্ষতি না করে, সেখানে দুরকম উপাদানের ওপর কাজ করে – অনুচক্রিকা ও ফাইব্রিনোজেন। অনুচক্রিকা নামের রক্তকণিকা ক্ষতের জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধার কাজ শুরু করে আর ফাইব্রিনোজেন এক ধরনের প্রোটিন যা ক্ষতস্থানে রক্তকে জমাট পিন্ডে তৈরি করে।
এখনও অবধি ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা হয়েছে, যাতে দেখা গেছে, ক্ষতস্থানে প্রাকৃতিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধার কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে এটা আগের পদ্ধতির থেকে বেশি কার্যকারী। ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এর রাসায়নিক প্রকৌশলী ব্র্যাডলি ওলসেন বলেছেন, দুটো উপাদানের ওপর কাজের ফলে ক্ষতস্থানে প্রথমে যে জেলির মতো উপাদান তৈরি হয়, তার ঘনত্ব বেড়ে যায়, আর প্রাকৃতিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধার শেষ ধাপ অনুসৃত হয়।
এই প্রক্রিয়ার প্রথম অংশ হল PEG-PLGA নামে একটা বায়োকম্প্যাটিবল পলিমার ন্যানো পার্টিকেল যা জখমের স্থানে অনুচক্রিকার সাথে আবদ্ধ করার জন্য বানানো হয়েছে। অনুচক্রিকাগুলো আঘাতের জায়গায় টেনে আনা হয়, যা আবার এই আবদ্ধ ন্যানো পার্টিকেলগুলি নিজেদের সাথে বহন করে আনে।
প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় অংশ হল একটি পলিমার যা ফাইব্রিনোজেনের জায়গা দখল করে, এবং ন্যানো পার্টিকেলগুলির সাথে কাজ করে ক্ষতস্থানে রক্তের দলা তৈরি করতে শুরু করে। গবেষকের দল এই দ্বিতীয় উপাদানকে একটি ক্রসলিঙ্কার হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা মূলত ক্ষতের চারপাশে তৈরি হওয়া কণাগুলিকে একত্রিত করে রক্ত জমাট বাঁধায়।