কুকুর মানুষের ভালো বন্ধু, এই অতি পুরানো কথাটা কী রোবট কুকুরের ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে? একদল বিজ্ঞানী এই কথাটা প্রমাণ করতে এই গ্রীষ্মে ওরেগনের তুষার-ঢাকা মাউন্ট হুডে যাবেন স্পিরিট নামের একটি কুকুরের আকৃতির রোবটকে কীভাবে হাঁটতে হয় তা প্রশিক্ষণ দিতে। আগ্নেয়গিরির বিচ্ছুরিত শিলা দিয়ে তৈরি মাউন্ট হুডে অবস্থিত বেশ কিছু হিমবাহ, সুতরাং গবেষকরা মনে করেন এই স্থানের পরিবেশ অনেকটা চাঁদের মতো – এবং স্পিরিটকে শেষ পর্যন্ত চাঁদের মাটি অন্বেষণের জন্যই প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডগলাস জেরোলম্যাকের মতে পা বিশিষ্ট রোবট চাকাওয়ালা রোবটের তুলনায় আরও ভালোভাবে মাটির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষমতা রাখে। এই মিথস্ক্রিয়াটি কেবল গতিশীলতা সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; এটি বাস্তব সময়ে যে পরিবেশের মধ্য দিয়ে রোবটটি চলাফেরা করবে তা সম্বন্ধে জানা বা বোঝার বিষয়। নাসার থেকে অর্থ পেয়ে তৈরি এই রোবটের মাথায় রয়েছে একটি ক্যামেরা এবং চারটি ধাতব পায়ের উপর নির্ভর করে সে চলাফেরা করে যাতে ঠিক মানুষের মতো তার পায়ের তলার অসম ভূখণ্ডকে সে অনুভব করতে পারে। মাটির অবস্থার উপর নির্ভর করে, স্পিরিট তার গতি এবং দিক নির্দিষ্ট করবে। গত গ্রীষ্মে, একটি পরীক্ষায় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে মাউন্ট হুডের পরিবেশে স্পিরিট কতটা মানিয়ে নিতে পারে? দেখা গেছে রোবটটি পিচ্ছিল তুষারের মধ্য দিয়ে যেমন চলাফেরা করতে পারে তেমনই আলগা মাটি এবং পাথরের উপর দিয়ে দৌড়াতে সক্ষম, যদিও মাঝে মাঝে সে হোঁচট খেয়ে পড়েছিল। এখনও অবধি, চাঁদের মাটিতে শুধুমাত্র চার চাকার রোভার অন্বেষণ করেছে। ১৯৬৯ সালের রাশিয়ার লুনোখোড ১ চন্দ্র পৃষ্ঠে ১০ মাসে প্রায় ১০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছিল। দু বছর পরে, অ্যাপোলো মিশনে একটি যান চাঁদে ৩৫ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল। সবচেয়ে সাম্প্রতিক ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশনের অংশ, চাকাযুক্ত রোবট, প্রজ্ঞান রোভার, ১০১ মিটার অতিক্রম করেছিল এবং দু সপ্তাহের মিশনের সময়কালে একটি গর্তের চারপাশে নেভিগেট করেছিল। যদিও মহাকাশচারীদের নিয়ে যাওয়া বা যন্ত্রপাতি বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোভার নিঃসন্দেহে উপযোগী, তবে এগুলো খাড়া পথে যেতে অনুপযোগী এবং নতুন জায়গা অন্বেষণ করার সময় তাদের চাকা বরফের রাস্তায় আটকে যেতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে পাওয়ালা রোবট ঢালু হিমায়িত পথে হেঁটে, পাথরের চাঁই পেরিয়ে অচেনা বিভিন্ন অঞ্চল অন্বেষণ করতে পারবে। গবেষকদের মতে চাঁদের পৃষ্ঠের খুব কম অংশই অন্বেষণ করা হয়েছে। সুতরাং এমন রোবট টিম থাকা বেশ উপযোগী যেগুলো অনাবিষ্কৃত ভূখণ্ড অনুভব করে বুঝে মানিয়ে নিতে পারবে। পরের বছর, গবেষকরা নিউ মেক্সিকোতে হোয়াইট স্যান্ডস অঞ্চলে এই রোবটদের প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনা করেছেন। তবে চন্দ্র পৃষ্ঠে কবে এই রোবটের পদধূলি পরবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।