অস্টিওপোরোসিস এমন এক ধরনের হাড়ের রোগ যা হাড়ের খনিজ ঘনত্ব, হাড়ের ভর কমে গেলে বা হাড়ের গঠন ও বা হাড়ের শক্তির পরিবর্তনের কারণে ঘটতে পারে। এতে হাড়ের শক্তি হ্রাস পেয়ে ফ্র্যাকচার বা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কলরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রিনোলজি, মেটাবলিজম এবং ডায়াবেটিস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ সোয়ানসন বলেছেন, অস্টিওপোরোসিস অনেক কারণে ঘটতে পারে যেমন হরমোনের পরিবর্তন, বার্ধক্য এবং জীবনযাত্রার কারণে, কিন্তু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসের ব্যাখ্যা পাওয়া শক্ত। তাই অস্টিওপোরোসিসের নতুন ঝুঁকির কারণ সন্ধান করা, হাড়ের মতো মানুষের জীবনকাল জুড়ে আর কী পরিবর্তন হয় তা দেখতে গিয়ে দেখা গেছে ঘুমের ধরন পরিবর্তন হয়। সোয়ানসন বলেন, মানুষের শিশুকাল থেকে ২৫ বছরের আশেপাশে, তাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব শীর্ষে পৌঁছোয়, তবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের হাড়ের ঘনত্ব বেশি থাকে। হাড়ের সর্বোচ্চ খনিজ ঘনত্ব পরবর্তী জীবনে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকির অন্যতম প্রধান নির্ধারক। হাড়ের খনিজ ঘনত্ব শীর্ষে পৌঁছানোর পরে, একজন ব্যক্তির হাড়ের ঘনত্ব কয়েক দশক ধরে মোটামুটিভাবে স্থিতিশীল থাকে। তারপরে, যখন মহিলারা মেনোপজ অবস্থায় প্রবেশ করেন, তখন তাদের হাড়ের ক্ষয় ত্বরান্বিত হয়। পুরুষদেরও বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।
সময়ের সাথে সাথে মানুষের ঘুমের ধরনও পাল্টায়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের ঘুমের মোট সময় কমে, ঘুমের গঠন পরিবর্তিত হয়। যেমন ঘুমোতে যে সময় লাগে, বয়সের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পায়। আবার স্লো ওয়েভ স্লিপ, যা গভীর পুনরুদ্ধারকারী ঘুম, আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। ঘুমের সময়কাল আর ঘুমের ধরনের সাথে সার্কাডিয়ান ফেজ অর্থাৎ পুরুষ এবং মহিলারা কখন ঘুমোতে যাওয়া বা ঘুম থেকে ওঠা পছন্দ করছেন, তাও মানুষের জীবনকাল জুড়ে পরিবর্তিত হয়।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৮ ঘণ্টার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রেখেছিলেন, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে পারতেন না। তাদের রাতের শিফটে কাজ করা তার আগে সাথে ৪ ঘণ্টা ট্রাভেল করা ধরে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল, যেখনে তারা ঘুমের জন্য কম সময় পান। গবেষকরা পরীক্ষার শুরুতে ও শেষে হাড়ের টার্নওভার মার্কারগুলি পরিমাপ করেছেন। সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে আভ্যন্তরীণ ভাবে হাড় ভাঙে ও নতুন করে গঠিত হতে থাকে, যা হাড়ের রিসর্পশান ও হাড় গঠন যাকে মার্কার দিয়ে পরিমাপ করা যায়। তারা ঘুম এবং সার্কাডিয়ান ব্যাঘাতের প্রতিক্রিয়ায় পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের হাড়ের টার্নওভারে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকারক পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন। কম ঘুমের ফলে ক্ষতিকারক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে হাড় গঠনের মার্কারের হ্রাস বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় অল্পবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা গিয়েছিল। তাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে কম ঘুমের ক্ষতিকারক প্রভাব হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে।