ওজেম্পিকের মতো ডায়াবেটিসের ওষুধ যা ওজন কমানোর একটি কার্যকর উপায় হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে গুরুতর পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা অনুসারে GLP-1 অ্যাগোনিস্ট নামে পরিচিত ওষুধ – যার মধ্যে রয়েছে উইগোভি, ওজেম্পিক, রিবেলসাস ও স্যাক্সেন্ডার মতো ব্র্যান্ড- পেটের পক্ষাঘাত, প্যানক্রিয়াটাইটিস, অন্ত্রের সমস্যা সহ গুরুতর রোগের সৃষ্টি করতে পারে। GLP-1 অ্যাগোনিস্ট মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধ ওজন কমানোর ড্রাগ হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। যদিও পূর্ববর্তী গবেষণায় ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই শারীরিক সমস্যা সবার নজরে এসেছিল কিন্তু এটিই প্রথম বড়ো আকারে জনসংখ্যা-স্তরের অধ্যয়ন যেখানে বলা হয়েছে ডায়াবেটিস নেই এমন রোগীদের ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার সৃষ্টি করে। গবেষকদের মতে একজন রোগী ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা সাধারণ ওজন কমানো, কোন বিষয়ের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করে ঝুঁকির মাত্রা আলাদা হবে। যারা অন্যথায় সুস্থ তারা এই সম্ভাব্য গুরুতর শারীরিক প্রতিকূলতা এড়িয়ে যেতেই চাইবে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা দাবির রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন এবং ২০০৬ এবং ২০২০-র মধ্যে যেসব ব্যক্তিদের দুটি প্রধান GLP-1 অ্যাগোনিস্ট- সেমাগ্লুটাইড বা লিরাগ্লুটাইড ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছিল তাদের পরীক্ষা করেন। তারা স্থূলতার জন্য এই ওষুধ ব্যবহারকারী রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে বা যাদেরকে অন্য একটি অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেন চারটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের মধ্যে কতজন রোগী একটি রোগে আক্রান্ত হয় এবং সেই হারকে অন্য ওজন কমানোর ওষুধ, যেমন বিউপ্রোপিওন ন্যাল্ট্রেক্সন ব্যবহারকারী রোগীদের সাথে তুলনা করেছেন। তারা দেখেন যে GLP-1 অ্যাগোনিস্ট ব্যবহারের ফলে- প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের ঝুঁকি ৯ গুণ বেশি, যা গুরুতর পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। অন্ত্রে বাধার ৪.২২ গুণ বেশি ঝুঁকি, যার ফলে খাদ্য অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে ক্র্যাম্পিং, ফোলাভাব, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। গ্যাস্ট্রোপেরেসিস বা পাকস্থলীর পক্ষাঘাতের ঝুঁকি ৩.৬৭ গুণ বেশি, যা পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে খাবারের প্রবেশ সীমিত করে এবং এর ফলে বমি, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
এই ওষুধগুলোর ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে, কেবল অনলাইনের মাধ্যমে ওষুধ নিজেদের কাছে রোগীরা আনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তারা ওয়াকিবহাল নয় যে এই ধরণের ওষুধ ব্যবহারের ফলে কী ঘটতে পারে। ইতিমধ্যে, গবেষকরা আশা করছেন যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারীরা তাদের পণ্যের জন্য সতর্কতা লেবেলগুলো নতুন করে সংশোধন করার কথা বিবেচনা করবে, যা বর্তমানে গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের ঝুঁকির কথা অন্তর্ভুক্ত করে না। গবেষকদের মতে এটি রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাতে তারা সময়মতো চিকিৎসা করতে পারে এবং গুরুতর পরিণতি এড়াতে পারে।