প্রদোষ মিত্তির ওরফে ফেলুদা তদন্তে এগোতে শুধু মগজ আর অনুমানের উপর ভরসা রাখেন। সেদিক থেকে শার্লক হোমসকে বলা যায় ল্যাবের গোয়েন্দা। প্রয়োজনে হরেক রকম রসায়নের সাহায্য নিতেও পিছপা হন না হোমস। কিন্তু গল্পের গরুকে গাছ থেকে নামালে আসল গল্পটা কেমন?
বিজ্ঞানীরা বলেন, আঙুলের চামড়ায় লেগে থাকা তেল আঙুলের ছাপেও থেকে যায়। সময়ের সাথে সাথে নষ্টও হয়ে যায় তেলের অণুগুলো। তাতে করে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঠিক বয়েস আর জানা যায় না। সমস্যার সমাধান করলেন, গোয়েন্দারা নন, বরং ইয়ং জিং লি এবং তাঁর সহকারি গবেষকদের দল। এসিএস সেন্ট্রাল সায়েন্স পত্রিকায় এমনই এক প্রতিবেদন বেরিয়েছে সম্প্রতি।
অপরাধ যখন ঘটছিল, অকুস্থলে ঠিক কোন কালপ্রিট ছিল? সফল তদন্তের জন্য এই তথ্যটা জানতে পারা হয়তো সবচেয়ে জরুরি। অপরাধীর বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ। অধ্যাপক জিং লির নেতৃত্বে ঐ গবেষক গোষ্ঠী দেখিয়েছে কীভাবে আঙুলের ছাপের তেলে ট্রাইঅ্যালকিল-গ্লিসারল বাতাসের ওজোন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে জারিত হয়ে নতুন পদার্থ তৈরি করতে পারে। কিন্তু ওজোন গ্যাস অন্য তেলের সাথে রসায়নে লিপ্ত হয়। যেমন – স্কুয়ালিন, মোমের এস্টার, ফ্যাটি অ্যাসিড কিংবা ডাইঅ্যালকিল-গ্লিসারল। ফলে শেষমেশ আরও জটিল কোনও জারিত যৌগ উৎপন্ন হয়। প্রোফেসর লি আর তাঁর সহকর্মী অ্যান্ড্রু পলসন ঐ জটিল মিশ্রনের খুঁটিনাটি তদন্ত করে একটা আণবিক নির্দেশক (মলিকিউলার মার্কার) তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এই মার্কার খুব সহজেই বলে দিয়ে পারবে আঙুলের চাপ ঠিক কতদিন আগেকার।
পরীক্ষাগারে নানান আঙুলের ছাপ নিয়ে সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছিল সাত দিন ধরে। সেখান থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রে তদন্ত করে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন নতুন দুটো আণবিক নকশা। এক, ইপোক্সাইডের উপস্থিতি আর দুই, মাঝারি আকারের ফ্যাটি অ্যাসিডের বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা। বিশেষত সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন, ক্যাপ্রিক অ্যাসিড বা ডেকানোয়িক অ্যাসিড বেশ ভালোরকমই বেড়েছে। সেখান থেকে পরীক্ষা করে নিখুঁতভাবে জানানো যাবে ঠিক কবে পড়েছিল আঙুলের ছাপ।