এবছর কী মশার প্রকোপ একটু বেশি? আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। ২০২৩ সালের বসন্ত এবং গ্রীষ্মে দক্ষিণ অন্টারিও সহ সারা বিশ্বেই রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা গেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি। আর তাই মশার আবাসস্থল বৃদ্ধি পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে মশার প্রজনন। টরন্টো মিসিসাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক রোজালিন্ড মারের মতে এবছরের শুরু থেকেই মশার প্রকোপ অনেক বেশি দেখা গেছে তার প্রধান কারণ হল মরশুমের অত্যাধিক বৃষ্টিপাত। মশারা ১৫ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রায় স্থির জলে ডিম পাড়ে। এবং এই বছরের পরিস্থিতি ছিল আদর্শ। সারা বিশ্বে এপ্রিলের তাপমাত্রা ছিল বেশ উষ্ণ। ফলত খুব তাড়াতাড়ি শীতের দীর্ঘস্থায়ী তুষার গলে যায় এবং তার পরে মে এবং জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। শহরাঞ্চলে যত্রতত্র কদাজল জমা হয় এবং পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধির জন্য আরও বিকল্প আবাসস্থলের সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে, তারা তাদের এলাকা থেকে বেড়িয়ে এসে উড়ে বেড়ায় আর প্লাবিত জায়গা বা জমা জলে ডিম পাড়ে। তারা এই জমা জলে বেঁচে থাকতে পারে। আর এই জমা জলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় যা আবার মশাদের খাদ্য।
যত বেশি তাপমাত্রা হবে তত দ্রুত মশারা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসবে। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, ডিম থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মশা হতে সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন কিন্তু যখন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা হয়, মশাদের প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে মাত্র ৪ দিন। প্রজাতির উপর নির্ভর করে মশা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন মশাদের অনুকূল আর্দ্র এবং উষ্ণ অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। উদ্বেগের বিষয় হল যে দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী এই প্রজাতিটি ধীরে ধীরে পৃথিবীর উত্তর অক্ষাংশে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ডেঙ্গু জ্বর, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস বা জিকা ভাইরাসের ভেক্টর হিসাবে কাজ করছে। গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কারণ তারা আরও বেশি করে এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রজাতিকে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে দেখছেন। গবেষকরা আরও বলেছেন যে শহুরাঞ্চলে মশারা বেশি কষ্টসহিষ্ণু এবং শক্তপোক্ত- তারা দূষিত জলে বসবাস করে ও ডিম পাড়ে। ড্রাগনফ্লাই মশা খায়। কিন্তু শহরাঞ্চলের লবণাক্ত পরিবেশে এরা বাঁচতে পারে না। আর তাই মশার বংশও বৃদ্ধি পায়। শীতকালের শুষ্ক পরিবেশে মশার সংখ্যা কমে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মশার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তাই দুশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা।