বিশ্বের অনেক জায়গায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, গত চার দশকে, প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য, খামারের মোট আয় ৬৬% কমেছে। উন্নত দেশের কৃষকরা চরম তাপের প্রভাবে তাদের ফলন এবং আয়ের ওপর ক্ষতি কমাতে প্রায়ই নানা ধরনের তথ্য ও রিস্ক ম্যানাজমেন্ট সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্যের অভাব রয়েছে আর ফসলের ফলন সঠিকভাবে পরিমাপ করা এসব দেশে বেশ কঠিন। কর্নেল জেব ই. ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির গবেষকরা এবং সহযোগীরা এমন এক কাঠামো তৈরি করেছেন যা বিজ্ঞানীদের উচ্চ-মানের তথ্য ছাড়াই ফসলের ফলন সম্পর্কে জানায়, যা প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশে দুষ্প্রাপ্য। এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন স্যাটেলাইটের পাঠানো ফটো থেকে সৌর-প্ররোচিত ক্লোরোফিল ফ্লুরোসেন্স (এসআইএফ) পরিমাপ করে তারা শস্যের ফলন অগ্রিম মূল্যায়ন করতে পারছেন। এই পদ্ধতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টা ক্ষেতে আর ভারতে গমের ক্ষেতে ব্যবহার করে কলেজ অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস সয়েল অ্যান্ড ক্রপ সায়েন্সেস সহযোগী অধ্যাপক ইং সান জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি সমস্ত ফসলের জন্য সার্বজনীনভাবে কাজ করবে। তারা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট থেকে সহজেই সস্তায় তথ্য পাওয়া যাবে আর দ্রুত তা ব্যবহার করা সম্ভব।
ক্লোরোফিল ফ্লুরোসেন্স হল সালোকসংশ্লেষকারী কলা বা জীব থেকে পুনরায় নির্গত লাল আলো। এটা উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষে শক্তি রূপান্তর পরিমাপ করতে পারে। এর থেকে ভুট্টা ক্ষেতে কতগুলো ভুট্টার শীষ হবে তা পরিমাপ করা যাবে না, কিন্তু ফ্লুরোসেন্স থেকে সালোকসংশ্লেষণের মাত্রা বোঝা সম্ভব হবে। আর ফসলের ফলন সালোকসংশ্লেষণের ওপর নির্ভরশীল। গবেষকদের মতে এই পদ্ধতিতে পাওয়া পূর্বাভাস নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, শস্য বীমা প্রতিষ্ঠা করতে যেমন সাহায্য করবে তেমনই কোন ক্ষেত্রে দারিদ্র্য দেখা দিতে পারে তা বুঝতে সাহায্য করবে। যে সমস্ত স্থানে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন, বা পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়, সেখানে স্যাটেলাইটের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে দুষ্প্রাপ্য সংস্থানগুলো নিয়ে তাকে পুনর্বণ্টন করলে তা ফসলের উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।