কৃত্রিম আলো সহজেই চাঁদের আলো এবং তারার আলোকে মুছে দেয়, কিন্তু প্রাকৃতিক আলো সামুদ্রিক জীবের জৈবচক্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। মানুষ, ফায়ারফ্লাইস এবং পাখি সহ ডাঙ্গায় যারা জীবন যাপন করে, রাতের কৃত্রিম আলো তাদের উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে উপকূলীয় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর আলোক দূষণের প্রভাব বিবেচনা করার জন্য আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত, এটা তিমি থেকে মাছ, প্রবাল এবং প্লাঙ্কটন পর্যন্ত সমস্ত জীবনকেই প্রভাবিত করে।
প্রাকৃতিক আলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত সামুদ্রিক জীবগুলো এখন উপকূল বরাবর মানুষের উদ্ভাবিত কৃত্রিম উত্স থেকে ক্রমবর্ধমান আলোর বন্যার মুখোমুখি। কৃত্রিম আলো সহজেই চাঁদের আলো এবং তারার আলোকে মুছে দেয়, কিন্তু চাঁদ ও তারার আলো সামুদ্রিক জীবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। এই সংকেত তাদের হরমোন চক্র, আন্তঃ-প্রজাতির আচরণ এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজন। কৃত্রিম আলো এখন তাদের এই সাধারণ জীবন চক্র ব্যাহত করছে। অ্যাকুয়াটিক কনজারভেশন: মেরিন অ্যান্ড ফ্রেশওয়াটার ইকোসিস্টেম জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে এই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক, কলিন মিলার, কৃত্রিম আলো কীভাবে সামুদ্রিক কচ্ছপকে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করেছেন। রাতে কৃত্রিম আলো সামুদ্রিক কচ্ছপের জন্য দুভাবে ক্ষতিকারক। মেয়ে কচ্ছপ তাদের ডিম পাড়ার জন্য শান্ত, অন্ধকার জায়গা খোঁজার চেষ্টা করে এবং আলো এড়াতে তারা উপকূলে আসে না। কচ্ছপের ছানাগুলো জলের উপর চাঁদের আলোর অভাবে আভ্যন্তরীণ আলোর দিকে চলে যায় এবং তারপর জলশূন্যতা বা অনাহারে মারা যায়।
এল ই ডি আলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সাথে, কৃত্রিম আলোর প্রকৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী প্রযুক্তির তুলনায়, এল ই ডি স্বল্প-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো নির্গত করে যা জলের গভীরে পৌঁছে যায়। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে অভিবাসী পাখির ক্ষেত্রে এর প্রভাব কমানোর প্রচেষ্টা সামুদ্রিক প্রজাতির ক্ষেত্রেও উপকারী হবে। গবেষকরা যতটা সম্ভব লাল আলো ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং কৃত্রিম আলো থেকে উপকূলরেখাকে রক্ষা করার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে বলেছেন। কারণ লাল আলো জলে বেশি দূর প্রবেশ করতে পারে না, ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি কম হয়।