মাদাগাস্কারের উত্তরে, আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, আলদাবরার প্রবালপ্রাচীরের প্রবাল চুনাপাথর দ্বীপে দেখা মেলে এক পাখির যারা দুবার বিবর্তিত হয়েছে এবং এই দুবারই তারা উড়তে পারেনি। পাখিটির নাম আলদাবরা রেল। প্রথম নজরে পাখিটির মধ্যে অসাধারণ কিছু চোখে পড়ে না। একটা ছোটো মুরগির আকারের পাখিটির পিঠ ধূসর রঙের, মাথাটি লাল, বুক ও গলা সাদা। ভারত মহাসাগরে এটিই একমাত্র জীবন্ত পাখি যারা উড়তে পারেনা, কারণ ডোডো বা রাফাস কুকুল্যাটাস-এর মতো পাখিরা আজ মানুষের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে।
লিনিয়ান সোসাইটির জুওলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে ১,৩৬,০০০ বছর আগে সমুদ্রের জলরাশির তলায় প্রবালদ্বীপ নিমজ্জিত হওয়ার আগে আলদাবরার রেলের যে জীবাশ্ম রেকর্ড পাওয়া গেছে তা প্রমাণ করে যে তারা তখনও উড়তে পারত না। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের একজন জীবাশ্মবিদ জুলিয়ান হিউম সেই সময়ে এক বিবৃতিতে বলেন, এই ঘটনাটি “প্রাণীজগতে প্রায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন” ঘটায়। প্রায় ১,১৮,০০০ বছর পর্যন্ত এলাকাটি জলের তলায় ছিল, এই ঘটনার ফলে উড়তে না পারা এই প্রজাতির পাখির বিলুপ্তি ঘটেছিল। কিন্তু তারপরে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। যখন প্রবালদ্বীপ পুনরুত্থিত হয়, তখন সাদা-গলাযুক্ত এই পাখিটি উড়তে সক্ষম হয় এবং প্রবালদ্বীপে পুনরায় বাস করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে বিবর্তনের ফলে আবার ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। গবেষকরা দেখেছেন যে প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে পাখিগুলোর পা ভারী এবং আরও শক্তিশালী ছিল অর্থাৎ তারা ভারী হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গবেষকদের মতে উড়তে না পারা এই পরিবেশে একটি উপকারী বৈশিষ্ট্য। এই পাখিরা মাটিতে তাদের ডিম পাড়ে, তাই ডিম ফুটে পাখির ছানা বেরিয়ে এলে তারা সোজা হয়ে দৌড়াতে পারে তাই তাদের শক্ত পা তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে পাখিদের পেক্টোরাল পেশি এবং ডানার পেশি সবচেয়ে দেরিতে বিকশিত হয়। আলদাবরা রেল মূলত দুবার বিবর্তিত হয়েছে, ইংরেজিতে একে বলে ইটিরেটিভ ইভোলিউশন বা পুনরাবৃত্ত বিবর্তন অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরে আরেকটি প্রজাতির জন্ম হয় যাদের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবর্তিত হয়ে হারিয়ে যাওয়া পাখিটির অনুরূপ তৈরি হয়।