ভূমি এবং সমুদ্র-ব্যবহারের পরিবর্তন, অন্যান্য জীবকে শোষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের পাশাপাশি বহিরাগত ক্ষতিকারক প্রজাতির গাছ পালা বা প্রাণি বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পাঁচটা প্রধান চালকের মধ্যে একটা। সম্প্রতি গৃহীত কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডায়ভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্কের টার্গেট ৬ হল জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রে আক্রমণাত্মক বহিরাগত প্রজাতির প্রভাব নির্মূল করা, হ্রাস করা, ন্যূনতম করা, প্রভাবের তীব্রতা কমানো।
চার বছর কাজ করার পর, আন্তঃসরকারি বিজ্ঞান-নীতি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস) আক্রমণাত্মক প্রজাতির বিষয়ে তার ল্যান্ডমার্ক রিপোর্ট প্রকাশ করতে প্রস্তুত যা এই বিষয়ে যথেষ্ট অর্ন্তদৃষ্টি প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে আক্রমণকারী বহিরাগত প্রজাতির মধ্যে বহুল পরিমাণে জলে পাওয়া যায় আফ্রিকান ক্যাটফিশ এবং ডাঙ্গায় নানা আগাছা প্রসোপিস জুলিফ্লোরা, পার্থেনাম হিস্টেরোফরাস, ল্যান্টানা প্রভৃতির দেখা মেলে। সিনিয়র প্ল্যান্ট ইকোলজিস্ট অঙ্কিলা হিরেমথ, অশোকা ট্রাস্ট ফর রিসার্চ ইন ইকোলজি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট (ATREE) জানান ভারতে আক্রমণাত্মক প্রজাতি সম্পর্কে সচেতনতা থাকলেও সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে এটা স্বীকৃত হয়েছে। ভারতের জাতীয় জীববৈচিত্র্য অ্যাকশন প্ল্যান (টার্গেট 4) এর অধীনে একটি লক্ষ্য হল বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক প্রজাতির প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। কিন্তু আমরা এখন উচ্চ সংরক্ষণ মূল্যের নির্দিষ্ট কিছু আবাসস্থলে আক্রমণাত্মক প্রজাতি কমানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু নতুন আক্রমণাত্মক প্রজাতির আগমন রোধ করার জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই।
আইপিবিইএস রিপোর্ট থেকে আমরা কী জানতে পারব, এই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হল এটা আক্রমণাত্মক প্রজাতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের এক সংশ্লেষণ। আক্রমণাত্মক প্রজাতির বিভিন্ন দিকের ওপর বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধান একত্রিত করে, তাদের পরিচিতি, প্রবণতা, প্রভাব, পরিচালনার প্রচেষ্টা, তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্বন্ধে সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য সেরা রূপরেখা। তার আশা এই রিপোর্ট ভারতের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে যে কীভাবে আমরা একটা দেশ হিসেবে আক্রমণাত্মক প্রজাতিগুলোর মোকাবিলা করব। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে আক্রমণাত্মক প্রজাতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য বেশ কয়েকটা আইন এবং নীতি বিদ্যমান, যেমন পরিবেশ সুরক্ষা আইন, প্রাণিসম্পদ আমদানি আইন, প্ল্যান্ট কোয়ারান্টাইন রুলস, কিন্তু আক্রমণাত্মক বহিরাগত প্রজাতির সমস্যা হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার আগে এর মধ্যে কিছু আইন বিদ্যমান ছিল। এছাড়াও, বিভিন্ন সরকারী বিভাগ এবং সংস্থাগুলিতে দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় উদ্ভিদ জেনেটিক রিসোর্সেস এবং প্রাণী জেনেটিক রিসোর্সেস যেগুলি কোয়ারেন্টাইন বিষয়ে কাজ করে যাতে বহিরাগত ক্ষতিকারক উদ্ভিদ বা প্রাণি অনুপ্রবেশ না করতে পারে। সবশেষে তিনি জানিয়েছেন আক্রমণাত্মক প্রজাতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা আমাদের একটি একক সর্বাঙ্গীন আইন প্রয়োজন তার সাথে এর দায়িত্বে একক নোডাল এজেন্সি থাকা দরকার।