প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি বছর আগে ‘মাস এক্সটিংশন’ বা গণবিলুপ্তির কারণে বহু পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে আবার কিছু পাখি বেঁচেও গেছে। এই রহস্যের উপর আলোকপাত করেছে সাম্প্রতিক দুটো গবেষণা। গবেষণায় আধুনিক পাখি ও তাদের প্রাগৈতিহাসিক ডানাযুক্ত আত্মীয়দের পালক ঝেড়ে ফেলার পদ্ধতির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। পাখিদের জন্য পালক এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পালকের সাহায্যে তারা ওড়ে, ছদ্মবেশ ধারন করে আবার পালক তাদের শরীর উষ্ণ রাখে তাদের সুরক্ষা দেয়। পুরানো পালক ঝেড়ে নতুন পালক গজাবার প্রক্রিয়াকে মোল্টিং বলে।
ক্রিটেসিয়াস রিসার্চে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রায় ১০কোটি বছর আগের একটি বাচ্চা পাখির অ্যাম্বারে সংরক্ষিত পালকের আবিষ্কারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন এই পাখির মধ্যে প্রিকোসিয়াল (পালক সহ জন্ম) এবং আলট্রিসিয়াল (পালক ছাড়া জন্ম) বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ দেখা গেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে পাখিটি একই সাথে তার সমস্ত পালক ঝেড়ে ফেলেছিল। এই বিলুপ্ত পাখিটি এনান্টিওরনিথাইনস নামের একটি দলের অন্তর্গত ছিল, যারা গণবিলুপ্তির ঘটনায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
কমিউনিকেশনস বায়োলজিতে প্রকাশিত দ্বিতীয় গবেষণা, আধুনিক পাখির পালক ঝেড়ে ফেলার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে গঠিত। গবেষকরা দেখেছেন যে আধুনিক পাখিরা সাধারণত বছরে একবার ক্রমানুসারে পালক ঝেড়ে ফেলে যাতে তাদের ওড়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয়। দেহের সমস্ত পালক ফেলে দিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে নতুন পালক গজানো শুধুমাত্র জলজ পাখির ক্ষেত্রে দেখা যায় যেমন- হাঁস, যাদের খাবারের সন্ধানে উড়ে যেতে হয় না।
দুটো গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে প্রাগৈতিহাসিক পাখি এবং পালকযুক্ত ডাইনোসরের মোল্টিং-এর পদ্ধতি আধুনিক পাখিদের থেকে আলাদা। হয়তো গণবিলুপ্তির সময় এই মোল্টিং-এর পদ্ধতি পাখিদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গবেষকদের মতে গ্রহাণুর প্রভাবের পরে সীমিত খাদ্য সংস্থান, ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় উষ্ণতা বজায় রাখা ও তাড়াতাড়ি মোল্টিং-এর কারণে এনান্টিওরনিথাইনস এবং অন্যান্য নন-এভিয়ান ডাইনোসরের বিলুপ্ত হয়েছে।