এসেক্স ইউনিভার্সিটির এক নতুন সমীক্ষা অনুসারে, আধুনিক কালে অভিভাবকদের চাপ এবং প্রত্যাশা শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত খেলা উপভোগ করার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। যদিও সন্তানদের বিকাশের জন্য বাবামায়েরা সর্বদা দায়বদ্ধ থাকেন, কিন্তু আশা করা হচ্ছে বাবামায়েরা বর্তমানে আরো বেশি করে তাদের সন্তানদের ইচ্ছা এবং আচরণের প্রতি নজর দেবেন এবং সেগুলো নজরে রাখতে আরও বেশি সময় ব্যয় করবেন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে শিশুরা স্বাধীনভাবে খেলার জন্য কম সময় ব্যয় করছে। স্বাধীন খেলার মাধ্যমেই শিশুরা ঘরের বাইরে খেলার ঝুঁকি এবং বিপদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এসেক্সের স্কুল অফ হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ারের ডঃ জন ডে ব্যাখ্যা করেন যে ১৯৯০-এর দশকের আগে পর্যন্ত, এটা আশা করা হয়নি যে বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের আজকের মতো অবিরাম নিরীক্ষণ করে চলবেন, তাই শিশুদের স্বাধীনভাবে খেলার স্বাধীনতা ছিল। আজ সেই শিশুরা পরিণত হয়েছে, তারা নিজেরাই আজ বাবা মা হয়েছে, সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে, তাদের সন্তানের বিকাশ নিয়ে তারা চিন্তাশীল হয়েছে তাই তাদের মনে এক উচ্চতর দায়িত্ববোধ জন্ম নিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যার জন্ম নিয়েছে। যেমন আশপাশে অপরিচিত বিপদের আশঙ্কা বা ভয় বেড়ে যাওয়ায় এবং রাস্তায় বেশি যানজট হওয়ার ফলে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীন খেলার মাধ্যমে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে, তাদের শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলত আজকের ছেলেমেয়েরা তাদের বাবামায়ের নজর থেকে দূরে একসাথে খেলার জন্য কম সময় ব্যয় করছে এবং অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে আরও বেশি সময় ব্যয় করছে এবং নানা ধরনের ক্লাবের মতো সংস্থার মাধ্যমে শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করছে। ডক্টর ডে ব্যাখ্যা করেন যে অভিভাবকদের তাদের সন্তানের সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে উত্সাহিত করা হয় আবার একই সাথে তাদের সন্তানরা কতটা স্বাধীন তা বিচার করা হয়৷ কিন্তু স্বাধীনতা সম্বন্ধে ছেলেমেয়েদের ধারণা তৈরি হয় যখন শৈশবে তারা নিজেরা স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দ বাছাই করে, ঝুঁকি নেয়। কিন্তু আজকাল এই সুযোগগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ২৮ জন ব্যক্তির সাথে তাদের শারীরিক কার্যকলাপের ইতিহাস এবং কীভাবে পরিবারের সদস্যরা এই অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করেছিল সে সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ডাঃ ডে এই প্রজন্মগত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তির তদারকিতে খেলা বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের বিকাশ একই সময়ে ঘটেছিল এবং সম্ভবত শিশুদের স্বাধীনভাবে খেলার ক্ষেত্র হ্রাস পেয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে জন্মগ্রহণকারী অনেক ছেলেমেয়ে, যারা ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বাবামা হয়েছে, তাদের মনে হয়েছিল যে তাদের সন্তানরা সক্রিয় থাকছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত কারণ সেই সময় শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে স্বাধীনভাবে খেলার সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। গবেষকদের মতে একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হওয়া দরকার যেখানে নিশ্চিত করা উচিত যে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তত্ত্বাবধানে না থেকে স্বাধীনভাবে খেলতে পারে। বাবামা এবং তাদের সন্তানরা এই পরিস্থিতিতে একসাথে আটকে পড়েছেন এবং তাই এটি পরিবর্তন করতে সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে৷