মস্তিষ্কে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য ঠিক নেই – চিকিৎসকের চেম্বারে বারবার এই প্রসঙ্গই ঘুরে ফিরে আসে যখন আলোচনাটা ডিপ্রেশন বা অবসাদ নিয়ে হয়। এমনকি চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠ্যবইতে কিংবা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় এই একটাই কথা। মানুষের মগজে হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের মতো রাসায়নিক পদার্থের গোলমাল হলেই অবসাদ হবে – এটা আধুনিক পৃথিবীতে বেদবাক্যের মতো ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই ব্যাখ্যাটা সত্যি নয়।
‘কেমিক্যাল ইমব্যালেন্স’ – এই শব্দবন্ধ ঠিক বা ভুল হওয়ার মতো স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ, ঠিক কোন ধরণের ঘটনা মগজের ভেতর ঘটলে তাকে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা বলা হবে সেটা পরিষ্কার নয় এখনও। প্রায়শই ডিপ্রেশনের সাথে সেরাটোনিনের যোগসাজশের কথা বলা হয়। কিন্তু অবসাদের বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে চাইলে সেটাই একমাত্র চাবিকাঠি মোটেই নয়। একই কথা খাটে মস্তিষ্কের অন্যান্য রাসায়নিকের ক্ষেত্রেও।
অবসাদ একটা জটিল মানসিক সমস্যা। কিন্তু সেটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যেসব ভুল ধারনার বশবর্তী হতে হয়, তাও কম জটিল নয়। কয়েক দশক আগে, যখন অবসাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল তখন বেশ কিছু লক্ষণকে একেবারেই গুরুত্ব না দিয়ে কেবলমাত্র নির্বাচিত কয়েকটা উপসর্গকে মূল বলে মনে করা হত। পারিপার্শ্বিকের প্রভাব, শারীরিক গঠন, মগজের ভেতর সূক্ষ্ম কণার আচরণ – সব মিলিয়ে ডিপ্রেশনের দুনিয়াটা বেশ ঘোরপ্যাঁচের। এছাড়াও জেনেটিক্স, ব্যক্তিত্ব, ছোটবেলা কিংবা বর্তমান জীবনের অবস্থা – অবসাদে ভোগা মানুষের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য না থাকলে রোগটাও বিশ্লেষণ করা দুষ্কর। বলা চলে, এই রোগের সামনে এসে বিজ্ঞান থমকে গেছে।
এই জটিলতার কারণেই ‘কেমিক্যাল ইমব্যালেন্স’-এর মতো সরলীকৃত ব্যাখ্যা এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্লিভল্যান্ডের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আওইস আফতাব বলছেন, ভুল হওয়া সত্ত্বেও কেন ঐ সরল ব্যাখ্যাটা সর্বত্র চলে। আফতাবের ভাষায়, ডিপ্রেশনের কারণ এককথার শ্লোগান নয়।