অতিচিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন

অতিচিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

কোনো বিষয় বারংবার রোমন্থন করা বা কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা প্রায়শই এক বলে বিবেচিত হলেও, দুটি আলাদা। চিন্তার পুনরাবৃত্তি আমাদের অতিরিক্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। কেন আমরা অতিরিক্ত চিন্তা করি সে বিষয়টা একটু বেশি জটিল। আমাদের মস্তিস্ক বিপদের আভাস খোঁজে ও তা মোকাবেলা করতে এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে। সেই অনুভূত বিপদের আভাস অতীতের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে হতে পারে, আবার ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এমন কল্পনার উপর নির্ভর করেও হতে পারে। “যদি” শব্দটির সঙ্গে সাধারণত নেতিবাচক ফলাফল যুক্ত হয়। এই ধরনের চিন্তা আমাদের প্রচুর আবেগের সাথে যুক্ত করে যেমন দুঃখ, উদ্বেগ বা রাগ, যার অর্থ আমরা সহজেই সেই চিন্তাগুলোতে আটকে যেতে পারি, সেগুলো কেন্দ্র করে ঘুরপাক খেতে পারি। কিন্তু যেহেতু সে ঘটনা হয় ইতিমধ্যে ঘটেছে বা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে কিন্তু এখনই ঘটছে না, ফলে আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারি না, তাই আমরা একই চিন্তাভাবনা চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনো সময় এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। যেসব মানুষেরা পূর্বে চ্যালেঞ্জের বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে বা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে গেছে তারা হয়তো অন্যান্যদের তুলনায় বেশি বিপদের আশঙ্কা করেন। চিন্তাশীল ব্যক্তি বা যারা উদ্বিগ্ন থাকেন, যাদের মেজাজ খারাপ থাকে এবং যারা সংবেদনশীল বা গভীরভাবে আবেগপ্রবণ তাদের অতিরিক্ত চিন্তা করার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও, যখন কেউ চাপে থাকে, তখন তাদের আবেগ শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তাদের চিন্তাভাবনাগুলো ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার অর্থ তারা আরও বেশি চিন্তাশীল হয়ে ওঠে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার ফলে আমাদের চিন্তাভাবনা মোকাবেলা করা এবং পরিচালনা করা আরও কঠিন হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার একটি কার্যকর উপায় হল – পরিবর্তন করুন, মেনে নিন বা ছেড়ে দিন। যেখানে সম্ভব চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে এবং পরিবর্তন করতে হবে। আপনার চিন্তা শুধু আপনার ধারণা, এগুলো সত্য বা নির্ভুল নয়, তবে যদি আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করেন, বার বার ভাবেন, সেগুলোকে পুনরাবৃত্তি করেন, তবে সেসব সত্য বলে অনুভূত হতে শুরু করে কারণ তারা পরিচিত হয়ে ওঠে। এই ধরনের অযৌক্তিক চিন্তা বন্ধ করতে আরো বাস্তবসম্মত চিন্তা নিয়ে আসা প্রয়োজন। আপনার আবেগকে গ্রহণ করে সেগুলো পরিচালনা করার উপায় সন্ধান করতে হবে যেমন নিজের যত্ন নেওয়া, সামাজিক সহায়তা ও কাছের লোকদের সাথে যোগাযোগ করা। মাথায় রাখতে হবে যে জীবনের অনিবার্য ফলাফল এবং সম্ভাবনার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, যা নিয়ন্ত্রণে আছে তা হল আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং আচরণ। মনে রাখবেন, আজ অবধি জীবনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ১০০% সাফল্যের হার আপনার রয়েছে। আপনি হয়তো ভিন্নভাবে জীবন চালাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তবুও, আপনি মোকাবেলা করেছেন এবং পেরেছেন। সুতরাং, শেষে ঠিক কীভাবে কী ঘটবে তা জানার প্রয়োজনীয়তাকে ছেড়ে আপনার এবং কখনও কখনও অন্যদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রাখুন। চিন্তার ‘অ্যাক্সিলেরেটর’ যেমন থাকবে, তেমন ‘ব্রেক’টাও যেন নিজের হাতে থাকে। এটি আসলে একটি অভ্যাস।