বহু পূর্বে যখন এই বিশাল মহাবিশ্ব ছোট্ট শিশু আকারে ছিল, তখন মহাবিশ্বে বিশেষ কিছু রাসায়নিক ছিল না। কিছু হিলিয়াম সহ হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য সামান্য কিছু উপাদান ছিল। নক্ষত্রের সৃষ্টি, তার বাঁচা, তার মৃত্যুর পর এল নানা উপাদান। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বের দূরবর্তী অঞ্চলে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং হওয়ার এক বিলিয়ন বছরের কম সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ধূলিকণা আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার থেকে বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, অশান্ত প্রারম্ভিক মহাবিশ্বে সম্ভবত বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যুর পরে তার থেকে কার্বন নির্গত হয়েছিল, যার ফলে কার্বনের উৎপত্তি।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমোলজিস্ট জোরিস উইটস্টকের নেতৃত্বে একটি দল নেচার পত্রিকায় জানিয়েছেন, রেডশিফ্ট 4-7-এ কার্বোনাসিয়াস ধূলিকণার সনাক্তকরণ করে তারা বিজ্ঞানীদের সৃষ্ট প্রাথমিক মহাবিশ্বে মহাজাগতিক ধূলিকণার উৎপত্তির মডেলের গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা দেখিয়েছেন। একটি রেডশিফ্ট হল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন – যেমন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি, তার সাথে ফ্রিকোয়েন্সি এবং ফোটন শক্তির অনুরূপ হ্রাস।
মহাবিশ্বের জীবনের প্রথম বিলিয়ন বছর যা মহাজাগতিক ভোর নামে পরিচিত, ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং এর পরে, একটি জটিল সময় যখন প্রথম পরমাণু গঠিত হয়; প্রথম তারা অন্ধকারে প্রথম আলো ফুটিয়েছিল। কিন্তু নক্ষত্র নিজেদের থেকে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের চেয়ে ভারী উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিজেরাই তৈরি করেছিল।
তাদের কোর অর্থাৎ কেন্দ্রের উত্তপ্ত, ঘন পারমাণবিক চুল্লির মতো স্থানে, নক্ষত্রগুলো পরমাণুদের ভেঙে একত্রিত করে জোড়া লাগিয়ে ভারী উপাদান সৃষ্টি করে, যাকে নাক্ষত্রিক নিউক্লিওসিন্থেসিস বলে। এই ভারী উপাদানগুলো প্রধানত নক্ষত্রের মধ্যে জমা হতে থাকে, এই ফিউশন উপাদান জ্বলে ফুরিয়ে গেলে নক্ষত্র মারা যায়, তখন এর কেন্দ্রের উপাদান চারপাশের মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়া হতে বেশ সময় লাগে।
উইটস্টক এবং তার সহকর্মীরা কসমিক ডনের অর্থাৎ মহাজাগতিক ভোর, যা বিগ ব্যাং-এর ৫০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন বছর পরে ঘটেছিল, সেই সময়ের মহাজাগতিক ধূলিকণা অধ্যয়ন করতে JWST ব্যবহার করে অন্যরকম কিছু দেখতে পেয়েছেন। তারা ছায়াপথগুলিতে কার্বন-সমৃদ্ধ ধুলো থেকে আলোর শোষণের সাথে যুক্ত বর্ণালীর একটি মিল পেয়েছেন। এই অপ্রত্যাশিত মিল দেখে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে বিগ ব্যাং হওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি কার্বনের অস্তিত্ব পাওয়া আশ্চর্যজনক, তবে তারা জানিয়েছেন বিশাল নক্ষত্র তার কেন্দ্রের জ্বালানী দ্রুত ফুরিয়ে ফেলে সুপারনোভাতে পরিণত হয়েছিল আর তাই তার উপাদান মহাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
মহাকাশে আমাদের চারপাশে রয়েছে এখনও এমন কিছু বিশাল নক্ষত্র আছে যা উলফ-রায়েট নক্ষত্র নামে পরিচিত। তারা সুপারনোভার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। তাদের খুব বেশি হাইড্রোজেন অবশিষ্ট নেই, তবে তাদের প্রচুর নাইট্রোজেন বা কার্বন রয়েছে এবং তারা খুব উচ্চ হারে সেগুলো বের করার প্রক্রিয়া আছে।
এই গবেষণা ব্যাখ্যা করেছে, প্রথম প্রজন্মে বিশাল নক্ষত্র ছিল, আর দ্রুত জ্বলে ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আজ মহাবিশ্বে দেখতে তাদের পাইনা।