আমরা জেনেছি; সার্স-কভ্-২ ভাইরাস ও তার ভ্যারিয়েন্টগুলি যেমন আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, ওমিক্রন “সিভিয়র্ অ্যাকিউট্ রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম রিলেটেড্ কোরোনাভাইরাস” স্পিসিসের অর্ন্তভুক্ত। আমি একটি সম্ভাব্য পথের প্রস্তাব রাখছি যে পথে এই স্পিসিসের সকল ভাইরাসের মানবকোষে বংশবৃদ্ধি আটকানো যেতে পারে, আর বলাই বাহুল্য যে এই বংশবৃদ্ধি রোখা গেলে কোভিড -১৯ বা এই জাতীয় সকল রোগ নিরাময়ও সম্ভব হবে কারণ এই বংশবৃদ্ধি রুখতে পারলে মানুষের শরীরের অনাক্রম্যতা তন্ত্রকে কম সংখ্যক ভাইরাসের সাথে লড়তে হবে ও অনাক্রম্যতা তন্ত্র ভাইরাসটিকে বুঝে সাইটোটক্সিক টি সেল বা অ্যান্টিবডির সাহায্যে তাকে ধ্বংস করার উপযুক্ত ব্যবস্থাটি নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাবে।
স্পিসিসটির যেকোন ভাইরাস কিভাবে মানবকোষে বংশবৃদ্ধি করে সেই বিষয়টা প্রথমে বুঝব।
ভিরিয়ন কণা মানবকোষে প্রবেশের পর তার নিউক্লিওক্যাপ্সিড্ মানবকোষের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে ও সেখানেই ভাইরাসের “আর.এন্.এ.” নিউক্লিওক্যাপ্সিড্ থেকে মুক্ত হয়। ভাইরাস মানবকোষের নিজস্ব “বার্তাবহ আর.এন্.এ.”-কে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তখন মানবকোষের “রাইবোজোম” মানবকোষের মধ্যে কেবল ভাইরাসের “আর.এন্.এ.”-কে সক্রিয় হিসাবে পেয়ে “আর.এন্.এ.”-টির সমগ্র দৈর্ঘ্যের দুই তৃতীয়াংশে যে নিউক্লিয়টাইড ক্রম আছে তাকে অনুসরণ করে “ট্রান্সলেশন্” পদ্ধতিতে দুই প্রকার পলিপ্রোটিন অণুশৃঙ্খল তৈরি করে – “পি.পি.১এ” ও “পি.পি.১এ বি”।
প্রতিটি পলিপ্রোটিন অণুশৃঙ্খলে তিন রকম উৎসেচক অণু থাকে – “প্রোটিজ”, “পাপাইন সদৃশ প্রোটিনেজ”, এবং “৩সি.এল.প্রো” যারা সেই পলিপ্রোটিন অণুশৃঙ্খলকে ভাঙতে সাহায্য করে। “পি.পি.১এ বি” তার মধ্যে উপস্থিত এই তিন রকম উৎসেচক অণুর সাহায্যেই ভেঙে ষোলো প্রকার “ননস্ট্রাক্চারাল প্রোটিন” তৈরি হয় – “এন.এস্.পি ১”, “এন.এস্.পি ২”,………,“এন.এস্.পি ১৬”। এই প্রোটিনগুলির মধ্যে কিছু প্রোটিন “রেপ্লিকেশন্ প্রোটিন” হিসাবে কাজ করে বলে তাদের “ননস্ট্রাক্চারাল রেপ্লিকেশন্ প্রোটিন” বলে। আবার ননস্ট্রাক্চারাল রেপ্লিকেশন্ প্রোটিনগুলির মধ্যে কিছু প্রোটিন একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে বহু প্রোটিণ অণু সমন্বিত “রেপ্লিকেজ-ট্রান্সক্রিপ্টেজ কমপ্লেক্স” তৈরি করে। এই কমপ্লেক্সে উপস্থিত প্রধান “রেপ্লিকেজ-ট্রান্সক্রিপ্টেজ প্রোটিন”-টি হলো “আর্.এন্.এ. ডিপেন্ডেন্ট আর্.এন্.এ. পলিমারেজ” বা “এন.এস্.পি ১২” যা ভাইরাসের “ট্রান্সক্রিপ্শন্” ও “রেপ্লিকেশন্” প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা নেয়, তবে কমপ্লেক্সটিতে উপস্থিত বাকি ননস্ট্রাক্চারাল প্রোটিনগুলিও প্রক্রিয়াদুটিতে সাহায্য করে। এই “ট্রান্সক্রিপ্শন্” ও “রেপ্লিকেশন্”-র মাধ্যমেই ভাইরাসের আর.এন্.এ.-কে নকল করে পরবর্তী প্রজন্মের ভাইরাসের জন্য আর.এন্.এ. তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, “এন.এস্.পি ১” ও “পাপাইন সদৃশ প্রোটিনেজ” মানুষের অনাক্রম্যতাকে দুর্বল করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এছাড়াও “এন.এস্.পি ১” মানবকোষের নিজস্ব “বার্তাবহ আর.এন্.এ.”-কে ধ্বংস করায় ও মানবকোষের স্বাভাবিক “ট্রান্সলেশন্” প্রক্রিয়াতে বাধা দেওয়ায় অন্যতম হোতা।
এখন মানবকোষে ভাইরাসগুলির বংশবিস্তারকে প্রতিরোধ করার সম্ভাব্য উপায়টি বুঝব।
“পাপাইন” উৎসেচকটি প্রধানত কাঁচা পেঁপে থেকে পাওয়া যায়। উৎসেচকটি খাদ্য ও ওষুধ শিল্পে যেমন অস্পষ্ট লেন্স পরিষ্কার করা, মাংস নরম করা, উন্ড অ্যাঢেশনের লাইসিস প্রক্রিয়া, হাইম্যানোপ্টেরা ও জেলিফিশের কামড় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জোলাপ, টুথ পাউডার, হজমের বড়ি, স্কিন লোশন শিল্পে যোজনীয় হিসাবে “পাপাইন” ব্যবহৃত হয়। বহু মানুষ যাঁরা এই সকল শিল্পে কর্মী হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁদের “পাপাইন” উৎসেচকের সংস্পর্শে আসতে হয় এবং সেই কারণে তাঁদের অনেককেই শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি ইত্যাদি শারীরিক অসুস্থতা সহ্য করতে হয় যেগুলি “কোভিড – ১৯” রোগের লক্ষণ ও উপলক্ষণগুলির মধ্যে পড়ে। সুতরাং “কোভিড – ১৯” রোগীদের মধ্যে যে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ও কাশি দেখা যায় তার কারণ হতে পারে তাঁদের সংক্রমিত কোষে ভাইরাস উৎপাদিত “পাপাইন সদৃশ প্রোটিনেজ” উৎসেচকের উপস্থিতি। যদি আমরা “কোভিড – ১৯” রোগীদের শরীরে “পাপাইন সদৃশ প্রোটিনেজ” উৎসেচক অর্থাৎ এনজাইমের অ্যান্টি-এনজাইম (অ্যান্টি-এনজাইম্ হলো কোন পদার্থ বিশেষত অ্যান্টিবডি বা কোন এনজাইম্ যা অপর কোন এনজাইমের ক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে) প্রয়োগ করে “পাপাইন সদৃশ প্রোটিনেজ” উৎসেচকের ক্রিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারি, তবে “পি.পি.১এ বি” স্বাভাবিকভাবে ভাঙতে পারবে না, ফলে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সবকটি ননস্ট্রাক্চারাল প্রোটিন তৈরি হতে পারবে না। এই অ্যান্টি-এনজাইম্ পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করার চেষ্টা করা যেতে পারে; অথবা “পাপাইন” নির্ভরশীল যে শিল্পগুলোর উল্লেখ করেছি সেখানে দীর্ঘদিন কর্মরত কিছু মানুষের শরীরে এই ধরনের অ্যান্টি-এনজাইম্ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে থাকতে পারে, তবে তা পরীক্ষা ও খতিয়ে দেখার বিষয়।