সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে বিকিরণ। আর সেই বিকিরণের তেজে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত স্যাটেলাইটগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ হচ্ছে যে তারা আগের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে নেমে আসছে! তারপর সেগুলি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীর পর ঝরেও পড়ছে! ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সোয়ার্ম নক্ষত্রপুঞ্জ অপারেটরদের চোখে প্রথম এই অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েছিল গত বছর। তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে, আগে বছরে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলির পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে নেমে আসা ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার করে ছিল। কিন্তু ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে প্রত্যেকটা কৃত্রিম উপগ্রহ প্রায় ২০ কিলোমিটার নেমে এসেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে!
সোয়ার্ম মিশনের ম্যানেজার আনজা স্ট্রোমে জানিয়েছেন, ২০১৯-এর ডিসেম্বরে একটি সৌরচক্র শেষ হয়ে আর একটি সৌরচক্র শুরু হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হতে ১১ বছরে লাগে। নতুন চক্র শুরু হওয়ার সময় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে উপগ্রহগুলো। এই সময় সূর্যের বাইরের অংশ থেকে তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে করোনাল মাস ইজেকশন, অর্থাৎ চৌম্বকক্ষেত্র।
মহাকাশে সোয়ার্ম মিশনের তিনটি উপগ্রহ রয়েছে। দুটি রয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় আর অন্যটি ৫১৫ কিলোমিটার উচ্চতায়। স্ট্রোম জানিয়েছেন, নিচে থাকা উপগ্রহটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এমন অবস্থায় পড়েছিল যে ওই উপগ্রহটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পড়ে যাছিল। শেষপর্যন্ত অনবোর্ড প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করে উপগ্রহটির উচ্চতা আরও বাড়ানো হয়। নাসার বিজ্ঞানীদের মনে হচ্ছে গত কয়েকদিন শুরু হওয়া এই সৌরশিখা বা সোলার ফ্লেয়ার হল সূর্যের ম্যাগনেটিক এনার্জির তীব্র বিস্ফোরণ। সাধারণ ভাবে এর সময়সীমা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে এই ফ্লেয়ার ঠিক কতদিন ধরে চলতে পারে সেই নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছুই বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।
তবে মহাকাশে থাকা অজস্র কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষতি মানে মানবসভ্যতার সংকট। বর্তমান যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে সামরিক ব্যবস্থা, সবই নির্ভরশীল এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলির ওপর। সংকটের মোকাবিলা কীভাবে বিজ্ঞানীরা ও প্রযুক্তিবিদরা করেন তার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।