রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে দিশা দেখাবে বিশ্ববিদ্যালয়

রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে দিশা দেখাবে বিশ্ববিদ্যালয়

অর্পন নস্কর
Posted on ২ জুলাই, ২০২২

গত ২৩ শে জুন, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সি ভি রমন ইউনিট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশানাল সার্ভিস স্কিম (এন এস এস) -এর যৌথ উদ্যোগে এবং রসায়ন বিভাগের সহায়তায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেপি বসু মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভা।
কেমিক্যাল ওয়েস্ট বা রাসায়নিক বর্জ্য – মানুষের রোজকার জীবনে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করে। এই বর্জ্য কেবল বর্জন করলেই হয় না, তাকে সামলাতে হয়। কেননা বর্জন যেমন খুশি ভাবে করলে সে প্রকৃতিকেই নষ্ট করবে, বিঘ্নিত করবে পৃথিবীর ভারসাম্য; যার প্রভাব পড়বে মানুষের রোজের জীবনে। তাই কীভাবে সামলানো হবে এসব রাসায়নিক বর্জ্য? বর্জ্য তো আর একরকমের নয়! – সে সংক্রান্ত আলোচনা ও গবেষণালব্ধ প্রস্তাবই উঠে এসেছে আলোচনাসভায়; বক্তাদের কথায়।
আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, রাজ্য সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পক্ষে তাপস গুপ্ত, রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক স্বপন ভট্টাচার্য, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক অনুপম দে সরকার, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সি ভি রমন ইউনিটের পক্ষে ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক অতীশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা।
যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান চর্চার তাগিদেই ল্যাবরেটরি গুলো থেকে যে কেমিক্যাল বর্জ্য বের হয় তা কলকারখানার তুলনায় নিতান্তই সামান্য। কিন্তু বের হওয়া বর্জ্যের পরিণতির দিকে তাকালেই দেখা যাবে সলিড ওয়েস্ট মিশছে মাটিতে আর লিকুইড হলে তা ড্রেনেজ সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে নানা জলাশয়, এমনকি গঙ্গার মতো বড় নদীতেও। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজটা কী? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য তো তুলনায় সামান্য! সেই বর্জ্যটুকু সামলানো গেলেই কি আর সামগ্রিক পরিবেশে রাসায়নিক বর্জ্যের প্রভাব আটকানো যাবে? এখানেই আলোকপাত করেছেন বক্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ই দিশা দেখাবে কীভাবে রাসায়নিক বর্জ্য কে বর্জনের আগে সামলানো যায়। রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক স্বপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সপার্ট টিম বসাতে হবে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াটা খুঁজে বের করার জন্যে। সি ভি রমন ইউনিটের পক্ষে অধ্যাপক অতীশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, বর্জ্যকে কেবল সামলানো নয়, তৈরি করতে হবে সার্কেল বা একটি চক্র। পশ্চিমের অনেক দেশ যেমন বর্জ্যের ধারণা থেকেই বেরিয়ে এসে নিষ্কাষিত বর্জ্যকে একটি সার্কেলের মধ্যেই ফেলতে আগ্রহী। যাতে বর্জ্যকে বিভিন্ন আলাদা পার্টিকেলে ভাগ করে পুনরায় প্রকৃতির জন্য শুভকরী করে তোলা যায়। এবং এই প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে বর্ধিত দ্বায়িত্ব নিতে হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রায় একই কথা বলেছেন সহ উপাচার্য অধ্যাপক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। অধ্যাপক ভট্টাচার্য জিরো ওয়েস্টের দিকে পৌঁছানোর পক্ষপাতি। ভারতবর্ষে কেমিক্যাল ওয়েস্টকে বিভিন্ন কম্পোনেন্ট এ ভাগ করে প্রকৃতিতে ক্ষতিকর দিক টাকে রুখে দেওয়ার পদ্ধতিই মূলত প্রচলিত। কিন্তু চিরঞ্জীব বাবু বলেন, আমাদের ‘গ্রীন টেকনোলজি’র দিকে যেতে হবে। বর্জ্যকে কেবল নিয়ন্ত্রণ নয়, প্রকৃতিকে যাতে ক্ষতি না করে সে পদ্ধতিই যথেষ্ট নয়, আমাদের ভাবতে হবে বর্জ্য কে বিভিন্ন কম্পোনেন্টে ভাগ করে কীভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়; যার একটা অর্থকরী দিকও থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ই সে বিষয়ে গবেষণা করবে। দিশা দেখাবে ইন্ডাস্ট্রিকে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক অনুপম দে সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গবেষণালব্ধ যেসব প্রক্রিয়া চালু আছে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের ; তা বিশদে আলোচনা করেন এবং নিজের গবেষণা সংক্রান্ত বোঝাপড়াও প্রস্তাবাকারে রাখেন। সব ল্যাবরেটরি বা ইন্ডাস্ট্রি থেকে যে বর্জ্য নিষ্কাশিত হয় তা পৃথক ধরনের একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই কম্পোনেন্টে ভাগ করার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জটিল। সার্বিক ভাবে এক কেন্দ্রিক প্রক্রিয়া এখনো নেই- বর্জ্যে কম্পোনেন্টগত তফাৎ তার অন্যতম কারণ। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পক্ষে তাপসবাবুও ‘পথ অনুসন্ধানের জন্য’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রেখেছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডও যে নিয়ন্ত্রণের কাজে সচেষ্ট তা উল্লেখ করেছেন।
সামগ্রিক প্রস্তাবাবলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক স্তরে আলোচনার প্রস্তাব দেন বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষে অতীশ নন্দী মহাশয়। সহ উপাচার্য সাদরে গ্রহণ করেছেন প্রস্তাব। সামগ্রিক ভাবে বলা যেতে পারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্ব্যবহার‍যোগ্য করে তোলার যে সমস্ত কথা উঠে এসেছে তা আধিকারিক স্তরে আলোচনার মধ্যে দিয়ে গবেষণা ও দিশা দেখানোর পথটি সুগম করবে।