বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, নর্দমা থেকে মূত্র আলাদা করার বিষয়টি তার ব্যবহারের মান পুনর্বিবেচনায় সহায়ক হতে পারে। বিজ্ঞান-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেচার-এর একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সুইডেনের বৃহত্তম দ্বীপ গোটল্যান্ডে জলবিহীন ইউরিনাল এবং বিশেষায়িত টয়লেট থেকে ৩ বছরে মোট ৭০,০০০ লিটার মূত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রস্রাব আমরা কৃষি ক্ষেত্রে কী ভাবে কাজে লাগাতে পারি, তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সের গবেষকদের একটি দল। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করছে স্যানিটেশন ৩৬০ নামে একটি সংস্থা।
সংবাদমাধ্যম নেচার-এর ওই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রস্রাব শুকিয়ে টুকরো টুকরো করে কংক্রিটের রূপ দিয়ে সেটিকে একটি গুঁড়ো পদার্থে পরিণত করেছেন। পরে সেটিকে সারে রূপান্তরিত করা হয়, যা নিয়মিত কৃষি সরঞ্জামের সঙ্গে কাজ করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই গবেষণার মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানীরা ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইছেন? স্যানিটেশন ৩৬০-এর সিটিও পৃথ্বী সিমহা বলছেন, প্রস্রাবের পুনর্ব্যবহারকে বিজ্ঞানীরা ‘ধারণার বাইরে এবং অনুশীলনে’ বড় আকারে নিয়ে যেতে চান। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, সার হিসেবে মূত্রের উপকারিতা বিশ্বজুড়ে অধ্যয়ন করা হয়েছে, যাকে ‘প্রস্রাব ডাইভারশন’ বলা হয়।
প্রস্রাবের পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পিছনে সহজ যুক্তি হল, মানুষের প্রস্রাব পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। সাধারণত, প্রস্রাবের গুরুত্ব না বুঝে আমরা সেটি সংরক্ষণ করার পরিবর্তে ফেলে দিই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবং স্যানিটেশন ৩৬০-এর কর্মীরা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান। তাঁদের দাবি, সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রস্রাব আমাদের জলাশয়কে দূষিত করার পরিবর্তে ফসলের সারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পৃথ্বী সিমহা আরও দাবি করছেন, বিশ্বব্যাপী বর্তমান নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস সারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ প্রতিস্থাপন করার জন্য যথেষ্ট প্রস্রাব তৈরি করে মানুষ। ফ্ল্যাশ করার জন্য জল ব্যবহার করার পরিবর্তে প্রস্রাব সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদী জল সংরক্ষণেও সাহায্যে করতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একটি মডেলিং সমীক্ষা অনুসারে, খুব খারাপ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে চীনের পরে ভারত বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় জলের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী। ভারতের পরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। টয়লেটের প্রোটোটাইপগুলি যা প্রস্রাবকে আলাদা করে এবং একটি গুঁড়ো পদার্থে শুকিয়ে দেয়, এখন সেগুলি বিশ্বজুড়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই প্রস্রাবকে এবার সঠিক কাজে ব্যবহার করার সময় এসে গিয়েছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা।