অঙ্ক, এই নামটার সঙ্গে যেন প্রীতি আর ভীতি একসঙ্গেই জড়িয়ে থাকে। যিনি অঙ্ক বোঝেন, তাঁর জীবনটা যেমন ধন্য ঠিক তেমনই তিনি বোঝে না, এই বিষয়টাই অসহনীয় তার জন্য| কেন এমন হয়? জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়েও কেন অনেকের মনে অঙ্ক ভীতি কাজ করে?
অঙ্কের ভিতটা তৈরি হয়ে যায় বা তৈরি করতে হয় ছোটোবেলা থেকেই। মেধা আর যৌক্তিক বিশ্লেষণ বা লজিকাল অ্যানালাইসিস ক্ষমতাকে ছোটো থেকেই চর্চা করার প্রয়োজন।শিশুকে ছোটবেলা থেকেই অঙ্কে উৎসাহিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে শুধুমাত্র থিওরিটিকাল জ্ঞানের পরিবর্তে হাতেকলমে বিভিন্ন পরীক্ষা যদি তার সামনে করে দেখানো যায় এবং তাকেও করতে দেওয়া যায়, তবে সে ধীরে ধীরে অঙ্ক বিষয়টিতে আগ্রহী হবে।
অবশ্য কোনও কোনও বিজ্ঞানীর মতে, কিছুটা জিনগত বৈশিষ্ট্যও গাণিতিক মেধার জন্য দায়ী। বর্তমান পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্কের পাঠ বাধ্যতামূলক। এর পিছনে গুরুতর কারণও আছে। অঙ্কের প্রাথমিক পাঠের ধারণা না থাকলে জীবনে চলার পথে পদে পদে ধাক্কা খেতে হয়। তাই এটা সবার জন্য অবশ্যই জরুরি। পরবর্তী পর্যায়ে শুধুমাত্র ইচ্ছুক ও অঙ্কে দক্ষতাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরাই বিষয়টি পড়বে করবে এটাই স্বাভাবিক।
একজন সাধারণ মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রাথমিক যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি ছাড়াও ব্যবহারিক বা সামাজিক সমস্যা সমাধানে পাটিগণিত, জ্যামিতি, পরিমিতি এই বিষয়গুলির প্রয়োগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। এই বিষয়গুলিকে বোঝার জন্য খুব বেশি মেধার প্রয়োজন নেই, তবে অবশ্যই ছোটোবেলা থেকে সঠিক সময় পাঠ্যক্রমের মধ্যে দিয়ে চর্চা করতে হবে। নিজের আয়, ব্যয়, সঞ্চয়ের হিসাব, ব্যাঙ্কের কাজ, রোজকার বাজার বা অন্যান্য কেনাকাটা – এই ধরনের রোজনামচায় যেমন পাটিগণিতের শিক্ষা কাজে লাগাতে হয়, ঠিক তেমনই বাড়ি, জমি কেনাবেচা বা মেরামত এই ধরনের কাজে জ্যামিতি ও পরিমিতির স্বাভাবিক জ্ঞান দরকার। আপনি নিজে হয়তো সুযোগ বা নির্দেশনার অভাবে সঠিকভাবে গণিতকে আয়ত্ত করে উঠতে পারেননি। তাতে কী? আপনার সন্তানকে নিয়ে গণিতের বিভিন্ন ছোটোখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও গণিতকে ভালোবেসে ফেলুন।
তিনটি বিভিন্ন মাপের ফাঁকা পাত্র নিন, সবথেকে বড়োটি ছাড়া বাকি দুটি জলপূর্ণ করুন। এবার সেই দুই পাত্রের জল বড়ো পাত্রতে ঢেলে দিন, ব্যাস এই হয়ে গেল যোগফল। যদি পাত্রগুলির ভূমির ক্ষেত্রফল সমান থাকে আর আপনি উচ্চতা বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্বে কিছু দাগ কেটে দেন, তাহলে এই পরীক্ষা দিয়ে যোগফলের মানও বের করে ফেলতে পারবেন। এবার বড়ো পাত্রের জল যে কোনও একটা ছোটো পাত্রে ঢেলে দিন। বাড়তি যেটুকু জল বড়োপাত্রে পরে রইল, সেটাই সংশ্লিষ্ট বিয়োগফল। গুণ বা ভাগ বোঝানোর জন্য পরীক্ষা করতে গেলে একটা বেশ বড়ো আকারের পাত্র আর অনেকগুলি হুবহু সমান আকারের ছোটো পাত্র নিয়ে নিন। বড়ো পাত্রটা ফাঁকা রাখুন আর ছোটোগুলো মুখ পর্যন্ত জলপূর্ণ করে নিন। এবার সবগুলি পাত্রের জল বড়ো পাত্রে ঢেলে ফেলুন। তার মানে একটা ছোটোপাত্রের যা আয়তন, তাকে ছোটোপাত্রের সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে বড়োপাত্রের জল যে দাগ পর্যন্ত উঠেছে সেই পর্যন্ত আয়তনের সমান হচ্ছে।
ভাগ শেখাতে চান? তাহলে গুণফল বের করার জন্য যে পরীক্ষাটা করলেন, সেই পরীক্ষার পর বড়ো পাত্রে আরও কিছুটা অতিরিক্ত জল ঢেলে দিন। এবার সেই পাত্রের জল আবার সমান মাপের ছোটো পাত্রগুলিয় ঢেলে ফেলুন। ব্যাস, এবার যতগুলি ছোটোপাত্র ছিল, সেটা হল ভাগফল। আর বড়ো পাত্রে বাড়তি যেটুকু জল পরে রইল – সেটাই ভাগশেষ।
জ্যামিতি বা পরিমিতির সুন্দর ধারণা তৈরির জন্য আপনার সন্তানকে নিয়ে মেপে ফেলুন আপনার ঘরের চার দেওয়ালের ক্ষেত্রফল। আয়তক্ষেত্রাকার দেওয়ালগুলির ক্ষেত্রফল থেকে দরজা আর জানালার ক্ষেত্রফলগুলি বিয়োগ করে ফেলুন। তাহলেই আপনার দেওয়ালের সঠিক মাপ পেয়ে যাবেন। সাধারণত দেওয়াল প্লাস্টার করা বা রং করার খরচ প্রতি বর্গ ফুট হিসাবে হয়। তাই আপনি খরচের পরিমাণ নিজেই হিসাব করে ফেলতে পারবেন। আবার একটি ইটের আকার এবং আপনার দেওয়ালের বেধ জানা থাকলে এই পদ্ধতিতে আপনি নিজেই হিসাব করে ফেলতে পারবেন আপনার বাড়ি তৈরি করতে কতগুলি ইট লেগেছে।
এইরকম সহজ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অঙ্ক-ভীতি দূর করে তৈরি করে দিন তার অঙ্কের ভিত।