‘আমি হলে এই চ্যালেঞ্জটা নিতাম কি না বলতে পারছি না,’ শুক্রবার সোনারপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস-এর মঞ্চ থেকে দৈনিক বিজ্ঞানভাষ আন্তর্জালিক পত্রিকার উদ্বোধন করে এমনই মন্তব্য করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই সংস্থার হাসপাতালের নতুন ভবনের উদ্বোধন এবং নার্সিং ভবনের শিলান্যাসের সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক বিজ্ঞানভাষের যাত্রাও শুরু হয় অভিজিৎবাবুর হাত ধরে। তিনি বলেন, ‘একটা বিজ্ঞানের দৈনিক প্রকাশ করা কিন্তু কম কথা নয়। সরল ভাষায় মানুষের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে হবে। বিজ্ঞান সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতে হবে।’
মানবিকতা এবং বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিজ্ঞান সাত তাড়াতাড়ি করোনারি ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলল। আর তার পরেই দেখা গেল মনুষ্যত্বের কতটা অবনতি হয়েছে। মানুষ কতটা অমানবিক হয়ে গিয়েছে।’ একদল ভ্যাকসিন পেল না। অন্যেরা ভ্যাকসিন নষ্ট করল কিন্তু যাদের দরকার তাদের দিল না।
তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে অভিজিৎবাবু বলেন, ‘যেই দেখা গেল ভ্যাকসিন ভালো কাজ করছে বড়লোক দেশগুলি লক্ষ লক্ষ ডোজ কিনে নিল। ব্যবহার না হওয়ায় লক্ষ লক্ষ ডোজ ফেলেও দিল। আর গরীব দেশগুলি ভ্যাকসিন কিনতেই পারল না। সেই সব দেশে মানুষের ভ্যাকসিন কেনারও সামর্থ্য নেই।’
এ প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রসঙ্গও উঠল। নোবেলজয়ী বললেন, ‘আমেরিকা ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ ডোজ নষ্ট করে ফেলেছে। কিছু রেখে দিয়েছে যদি বুস্টার ডোজের প্রয়োজন। প্রয়োজন না হলে আরও ভ্যাকসিন ফেলে দেবে তারা।’
করোনার প্রতিষেধক হিসেবে বিজ্ঞান ভ্যাকসিন তৈরি করলেও, এই সংক্রমণের সঠিক ভবিষ্যৎবাণী দিতে ভুল করেছে বিজ্ঞান। তাতে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে বলেও মনে করেন অভিজিৎবাবু। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎবাণী যদি ভুল হয় তাহলে বিজ্ঞানের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। তার ফল হয় মারাত্মক।’ ভারতের প্রসঙ্গ তুলে নোবেলজয়ী বলেন, ‘বিজ্ঞানের কথা মেনেই হঠাৎ করে সব কিছু বন্ধ করে দিল (লকডাউন) কেন্দ্রীয় সরকার। বিজ্ঞানের কথা শুনে সব খুলেও দিল একসময়। কিন্তু করোনা আছড়ে পড়ল তার পরেই। এতে বিজ্ঞানের উপর থেকে বিশ্বাস কমে গেল। আর বিজ্ঞানের পূর্বাভাসে আস্থা রাখতে পারছে না মানুষ। বিজ্ঞানকে মানছে না তারা।’
বিজ্ঞানের উপরে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানভাষের মতো পত্রিকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন অভিজিৎবাবু। বলেন, ‘বিজ্ঞানের ভুলগুলি ধরিয়ে দিতে হবে। মানুষের মনে প্রশ্ন তোলাতে হবে। মুক্তভাবে আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। তবেই বিজ্ঞানের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরবে।’