লন্ডনের কিউ গার্ডেনের সবচেয়ে দ্রষ্টব্য হল পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে গন্ধযুক্ত দৈতাকৃতি ফুলের গাছ টাইটান অ্যারাম। এর স্বাভাবিক বাসস্থল নিরক্ষরেখার কাছে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, সেখানকার আবহাওয়ার অনুকরণে এই বিশালদেহী গাছকে গ্রিনহাউসে রাখা হয়। কিন্তু এই গাছ যেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ সংগ্রহশালার এক রাজকীয় রত্ন। কারণ এই গাছ এমন সময়ে এখানে স্থান পেয়েছিল, যখন সাম্রাজ্যের সম্পদ এবং বৈচিত্র্য দেখানোর একটা উপায় ছিল গ্রীনহাউস, যা প্রকৃতিকে হারিয়ে মানুষের বিজয় নিশান স্থাপনের এক প্রচেষ্টা। ইউরোপীয়রা পৃথিবীর নানা স্থান থেকে দুষ্প্রাপ্য গাছ এনে লন্ডনের কিউ গার্ডেনে তাদের গ্রিনহাউসে রেখেছিলেন। ইতালীয় উদ্ভিদবিদ ওডুয়ার্দো বেকারি ১৮৭৮ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় মধ্য সুমাত্রা পরিদর্শন করার সময় এই গাছের প্রজাতিকে পশ্চিমা বিজ্ঞানের নজরে আনেন, কিন্তু কোথাও তিনি স্থানীয় মানুষদের স্বীকৃতি জানাননি।
লন্ডনের কিউ গার্ডেনে, টাইটান অ্যারাম যার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যামরফোফ্যালাস টাইটানাম এই মাসের গোড়ার দিকে ফুটতে শুরু করেছে। এই গাছগুলোতে সাধারণত কয়েক দশকে একবার ফুল ফোটে, বাকি সময়ে তাদের বিশাল পুষ্পমঞ্জরীকে শক্তি দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ কাণ্ডের নীচে কর্ম শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। এই বিশাল পুষ্পবিন্যাস তিন মিটার লম্বা হয়, যা বিশ্বের বৃহত্তম শাখাবিহীন ফুল। আর এই গাছের ফুলের পচা মাংসের মতো গন্ধ শুঁকলে পেট গুলিয়ে বমি উঠে আসবে, তাই এটা মৃতদেহ ফুল নামেও পরিচিত। এটা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে মাছি এবং বীটলের মতো মাংসখেকো পরাগায়ণকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য তেল ডিফিউজারের মতো তাপ এবং গন্ধ ছড়ায়। তবে এবারে এই ফুলের দর্শকরা জানিয়েছেন, যতটা গন্ধের কথা বলা হয় তার তুলনায় গন্ধ বেশ কমই বেরোচ্ছে। তবে এই বিশালদেহী ফুল মোটে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এবারে প্রথম গাছের ফুল প্রায় শুকিয়ে গেলেও অন্য গাছগুলোতে ফুল আসতে চলেছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে গন্ধ না শুঁকেও এই ফুল চাক্ষুষ করার এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।