বহু বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে মঙ্গলগ্রহের মেরু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ওয়াটার আইস আটকে আছে অথচ বিষুবরেখার চারপাশ অনুর্বর শুষ্ক বর্জ্যভূমির মতো যেখানে কোনো বরফ নেই। রুক্ষ, পাথুরে এই প্রতিবেশী গ্রহকে অনেকটা ‘নারকেলে’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের বাইরের আস্তরণ পুরোপুরি শুকনো। কোথাও শুষ্ক বরফের পাহাড় কোথাও বা মাইলের পর মাইল শুধু ধূলো আর পাথরের আস্তরণ। কোথাও জলের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যাচ্ছে মঙ্গল গ্রহের দৈত্যাকার শিল্ড আগ্নেয়গিরিতে ওয়াটার ফ্রস্ট দেখা গেছে তবে ঘটনাটি ক্ষণস্থায়ী, সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি তা বাষ্পীভূত হয়ে যায়। গবেষকদের হিসেব বলছে যে দৈনিক ভিত্তিতে পৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ১৫০,০০০ টন জল চক্রাকারে চলে। ২০০৮ সালে ওয়াটার আইস আবিষ্কারের পর থেকে মঙ্গলের মেরু অঞ্চল গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জানা যায় এই ওয়াটার আইস স্থায়ী হলেও ঋতু অনুসারে আকারে পরিবর্তিত হয়৷ শীতকালে এবং সম্পূর্ণ অন্ধকারের সময়, গ্রহের পৃষ্ঠ ঠান্ডা হয়ে যায় এবং বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বরফের বিশাল চাঁইয়ের আকারে পৃষ্ঠে জমা হয়। তারপর মেরুঅঞ্চল যখন আবার সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে হিমায়িত কার্বন ডাই অক্সাইড সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়াও, মেরুগুলো বেশিরভাগ হিমায়িত ওয়াটার আইস দ্বারা গঠিত। জমা কার্বন ডাই অক্সাইডের চাঁই জমাট বাধা ওয়াটার আইসের তুলনায় পাতলা, উত্তর মেরুতে প্রায় ১ মিটার পুরু এবং দক্ষিণ মেরুতে প্রায় ৮ মিটার পুরু। গবেষকরা মঙ্গল গ্রহে থারসিস আগ্নেয়গিরির উপরে ওয়াটার ফ্রস্ট শনাক্ত করেছে। এই আগ্নেয়গিরি লাল গ্রহের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরিদের মধ্যে অন্যতম। মঙ্গল গ্রহের অলিম্পাস মনসের উচ্চতা সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি। এই প্রথম মঙ্গল গ্রহের নিরক্ষরেখার আশেপাশে ওয়াটার ফ্রস্ট আবিষ্কৃত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত, ভাবা হয়েছিল সৌর বিকিরণের মাত্রা এবং পাতলা বায়ুমণ্ডলের কারণে বিষুবরেখার চারপাশে এই ধরনের ওয়াটার ফ্রস্টের সম্ভাবনা খুবই কম। এই ঘটনার ফলে বলা যেতে পারে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেশি হতে পারে। এখন দেখতে হবে মঙ্গল গ্রহে জল কোথায় থাকতে পারে, এবং পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে তা কীভাবে চক্রাকারে চলাচল করে।