শরীরের যত্ন নিতে ফল বা শাকসব্জির ভূমিকা অপরিহার্য। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে শরীরে পুষ্টি জোগান দেওয়া— সবেতেই ফল ও শাকসব্জি দারুণ কার্যকরী। রোজের খাদ্যতালিকায় তাই ফল বা সব্জি থাকা জরুরি। আমরা সকলেই জানি যে টাটকা ফল বা শাকসব্জি আমাদের শরীরের জন্য ভালো, তবে বাড়িতে একসঙ্গে এগুলো কিনে রাখলে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর কারণ হল ফসল কাটার পরেও, ফল শাকসব্জির মধ্যে শ্বসনের মতো বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সর্বোপরি, তাজা উৎপাদিত শাকসব্জি বা পণ্য বিভিন্ন জীবাণুর কারণে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। এই জীবাণুর মধ্যে কিছু রয়েছে নিরীহ আবার কিছু জীবাণু রোগের কারণ হতে পারে। ফল, শাকসব্জি কিনে এনে ফ্রিজে রেখে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, কারণ বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি বা ফল তাদের সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সুতরাং, উপায় কী?
ফসলের গুণমান নির্ভর করে ফসল তোলার আগে ও পরের কিছু কারণের উপর যেমন- জলবায়ু পরিস্থিতি, মাটির ধরন, জলের প্রাপ্যতা বা ফসল কাটার পরে সেগুলো ধোয়া এবং পরিষ্কার করা, পরিবহন, বিতরণ, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণ। ভোক্তা হিসেবে আমরা এই বিষয়গুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা যে ফল শাকসব্জি বাজার থেকে কিনে থাকি সেগুলো সংরক্ষণ করার আগে ধোয়ার দরকার নেই, আর ধুলেও তা সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিতে হবে কারণ অতিরিক্ত আর্দ্রতা ফ্রিজে শাকসব্জি বা ফলের পচনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তবে ব্যবহারের আগে ফল শাকসব্জি পরিষ্কার জল দিয়ে ধোয়া প্রয়োজন কারণ খাবার হিসেবে ব্যবহারের আগে ময়লা এবং জীবাণু দূর করা গুরুত্বপূর্ণ। ধোয়ার জন্য ভিনিগার বা বেকিং সোডা ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কোথায় পণ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যেমন কলা, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, মিষ্টি আলু এবং কুমড়ো রান্নাঘরে অন্ধকার জায়গায় রাখা যেতে পারে। আলু এবং পেঁয়াজ একসাথে সংরক্ষণ করা ঠিক না, কারণ পেঁয়াজ ইথিলিন নামে একটা গ্যাস তৈরি করে যা আলুকে দ্রুত নষ্ট করে দেয়, আবার আলুতে থাকা আর্দ্রতা পেঁয়াজে পচন ধরায়। ফলের মধ্যে আপেল, নাশপাতি, অ্যাভোকাডো এবং কলা একত্রে সংরক্ষণ না করাই ভালো কারণ এই ফলগুলো পাকার সময় ইথিলিন গ্যাস নিঃসরণ করে, যার ফলে আশেপাশের অন্য ফলগুলো খুব দ্রুত পেকে যায় ও নষ্ট হয়ে যায়। সব ধরনের শাক, গাজর, শসা, ফুলকপি এবং ব্রকলি ঠাণ্ডা জায়গায় কম আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করা ভালো। তবে এগুলোকে সম্পূর্ণভাবে সিল করা ব্যাগে রাখলে তাড়াতাড়ি পচন ধরতে পারে। মোট কথা ফল শাকসব্জি বেশি কিনে এনে নষ্ট করা ঠিক নয়, তাই বাড়িতে নিজে নিজেই পরীক্ষা করে পণ্য সঞ্চয় করার সেরা উপায় নিজেই খুঁজে বের করে নিতে পারেন।