০ শে মে, ২০২৪-এ, এক বিপুলায়তন হিমশৈল ভেঙে বেরিয়ে এল অ্যান্টার্কটিকায়। ৩৮০ বর্গকিলোমিটারের হিমশৈলটি অ্যান্টার্কটিকার ব্রান্ট আইস শেল্ফ থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসে। ঘটনাটি বিগত চার বছরে এই অঞ্চলের তৃতীয় উল্লেখযোগ্য হিমশৈলের ভাঙন। প্রথম ভাঙনটি ২০২১ সালে ঘটেছিল, তারপর ২০২৩ সালে আরও বড়ো একটি বরফের চাঁই ভাঙে।
হিমশৈলের এই ভাঙন পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণকারী দুটি স্যাটেলাইট বা উপগ্রহের মাধ্যমে ধরা পড়ে – কোপার্নিকাস সেন্টিনেল -১ এবং নাসার ল্যাণ্ডস্যাট ৮ উপগ্রহ। এই উপগ্রহগুলো পৃথিবীতে রাডার চিত্র সহ তাপ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে। ইউএস ন্যাশনাল আইস সেন্টার আইসবার্গ বা হিমশৈলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ-৮৩ নামে নথিভুক্ত করেছে। এই নামকরণ নির্ভর করে হিমশৈলটি প্রথম কোথায় দেখা গিয়েছিল তার উপর। যেহেতু ব্রান্ট পূর্ব ওয়েডেল সাগরে অবস্থিত, তাই এর হিমশৈলগুলো ‘এ’ নামে নামাঙ্কিত হয় এবং সংখ্যাগুলো ক্রমানুসারে বরাদ্দ করা হয়। উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে আইস শীটগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের অ্যান্টার্কটিকার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা নিরীক্ষণ করেন কীভাবে বরফের চাঁইগুলো বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে তাদের কাঠামো বজায় রাখে। কোপার্নিকাস সেন্টিনেল-১ মিশন রাডার ইমেজিংয়ের মাধ্যমে সারা বছর দিন রাত নির্বিশেষে ছবি পাঠায়। শীতকালে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেখানে ছয় মাস কার্যত কোনো সূর্যালোক থাকে না এবং এই সময়টা অ্যান্টার্কটিক নাইট নামে পরিচিত। ল্যান্ডস্যাট ৮-এর মতো মিশন বরফের শীট কতটা পুরু তা মাপতে থার্মাল ইমেজিংয়ের উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্টিকার বরফের রাজ্য গোটা পৃথিবীর তুলনায় অনেক দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। সেই কারণেই ওয়েডেল সাগরে এত পরিমাণ হিমশৈল নজরে পড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তর বৃদ্ধি, উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা এবং চরম আবহাওয়ার পাশাপাশি, মেরু বরফের এই গলনের ফলে অতিরিক্ত সৌর বিকিরণ পৃথিবীর মহাসাগর শোষণ করে, যার ফলে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়।